দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো। খানিকটা বিরক্ত মনে হলো জহিরকে। এতোক্ষণ এতোকাজ করে সবেমাত্র বসেছিল ও,কিন্তু এখন আবার কে আসল??? দেখার জন্য বিরক্ত মন নিয়ে দরজার কাছে গেল ও।দরজা খুলতেই দেখল তরুন একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে,বয়স মনে হয় ২৫ বা তা আশেপাশে হবে। এমনিতেও রাগী স্বভাবের মানুষ জহির, বিরক্তির সাথে বলল,
জহির: কী চাই???
আগন্তক: একটু পানি পাওয়া যাবে??? পিপাসা পেয়েছে।
জহির: হ্যা দেওয়া যাবে।
আকাশ: ভিতরে বসা যাবে কী???
জহির: আসুন।
রাগী মানুষ হলেও সে এমন নয় যে কেউ পানি খেতে চাইলেও তাকে খেতে দেবে না।তাই ভিতরে বসার ঘরে বসাল ওকে। বসিয়ে পানি পান করতে দিল তরুণ আগন্তককে। আগন্তক নিজের পরিচয় প্রদান করার ভঙ্গিতে বলল,
আগন্তক: আমার নাম আকাশ।আপনার নাম জানা যাবে কী??? মানে কথা বলতে সুবিধা হতো।
জহির: আমার নাম জহির।আর আমি কারও সাথে কথা বলতে চাই না,পানি খেতে চেয়েছেন, দিয়েছি। এখন মানে মানে কেটে পরুন।
রাগের সঙ্গে কথাগুলো বলল জহির। এমন রাগের কথা শুনলে যে কোনো মানুষই রেগে যাওয়ার কথা,কিন্তু আকাশ মুখে মৃদু হাসি এনে বলল,,,
আকাশ: আপনার বিজনেস পার্টনার মিঃ সফিককে খুন করার পর থেকেই বুঝি এমন হয়ে গেছেন??? মানষিক শান্তি পাচ্ছেন না।ঠিক বললাম তো।
জহির অবাক হওয়ার ভাব ফুটিয়ে বলল,
জহির: এসব কী বলছেন??? পাগল নাকি আপনি??? দেখুন শহরের একজন বড় বিজনেস ম্যান আমি, আর আমি এমনও নই যে কাওকে খুন করব।
আকাশ: হাসালেন দেখছি।মাত্র ছয় মাস হলো ওই ঘটনা ঘটল, আপনার জীবণে এতো বড় পরিবর্তন আসল আর সব ভুলে গেলেন???
জহির: এসব কী বাজে বকছেন আপনি???
আকাশ এবার খানিকটা আপন মনেই বলে চলল যেন নিজের সাথেই কথাগুলো বলছে,
আকাশ: মনে হয় ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন আপনি, তবে না হয় আবার মনে করিয়ে দেওয়া যাক। টি. কে. এস. নামের কোম্পানির দুইজন শেয়ার হোল্ডার মিঃ জহির এবং মিঃ সফিক বাল্যবন্ধু।ছয় মাস আগে তারা পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছিল। জহির লোকটার খুবই টাকার দরকার ছিল, কারণ তার জমা টাকাগুলো একটা জায়গায় আটকে আছে।সফিকের কাছে টাকা চাইলো, কিন্তু দিতে রাজি হলো না। কারণ এর আগেও কয়েকবার সাহায্য করেছে। তখন জহির মনে মনে প্ল্যান করল, আমাদের বিজনেসের দুইজনই তো শেয়ার হোল্ডার, একজন মারা গেলে অপরজন সবটা বিজনেসের দায়িত্ব পেয়ে যাবে। তারপর কী হলো আশা করি আপনার খুব ভালো করেই মনে আছে???
জহির: কী সব আজেবাজে বকছেন আপনি??? সফিক পা পিছলে পাহাড় থেকে পড়ে গিয়েছিল। আর আপনি আমায় দোষ দিচ্ছেন???
আকাশ: পা পিছলে পড়ে গিয়েছিল নাকি কেউ ঠেলে ফেলে দিয়েছিল???
জহির: কে ফেলে দিয়েছে??? আমি নিজের চোখে ওকে পা পিছলে পড়ে যেতে দেখেছি, প্রত্যক্ষ দর্শী আমি, আপনি না,তাহলে আপনি কী করে এসব বলতে পারেন???
আকাশ: আপনিই তো একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী না,কারণ আরও দুইজন প্রত্যক্ষদর্শী আছে।
জহির: কে সে???
আকাশ: একটা ক্যামেরা এবং একজন পর্যটক।
জহির: তাই নাকি???
বিদ্রুপ করার মতো হাসি হাসল জহির।
আকাশ: হ্যা,এই যে দেখুন কয়েকটা ছবি। তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আপনি তাকে ঠেলে ফেলে দিচ্ছেন।
জহির মনে মনে প্রচন্ড অবাক হলো। কারণ ছয় মাস হয়ে গেছে ওই ঘটনার। যতো প্রমান থাকতে পারে তার বিরুদ্ধের সব প্রমাণ সে লুপাট করে দিয়েছে। এমনভাবে সব করেছে যে কারও সন্দেহই হয় নি যে শফিক কারও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। সেদিন মেঘে ভিজে ছিল পাহাড়। আর জহিরের মাথায় একটা প্ল্যানও চলে আসে, সে শফিকের হাতে তার বাইনোকুলারটা দেয় চারপাশ দেখার জন্য। শফিক যখন সৌন্দর্য দেখায় ব্যস্ত,তখনই জহির তাকে ঠেলে ফেলে দেয়। তারপর সব প্রমাণ সব দূর করে দেয় সে। জহির তার মন এবং মুখের স্পষ্ট অবাক হওয়া ভাব লুকাতে চাইছে, কিন্তু সে লুকাতে পারছে না।আকাশ একজন পর্যটক এবং ডিটেকটিভ।তার চোখে এই অবাক হওয়া ভাবটা এড়ালো না।
আকাশ: কী মিঃ জহির, অবাক হলেন মনে হচ্ছে।ভাবছেন এই ছবিটা আমার কাছে কী করে।তাই তো???
জহির কিছু বলল না,শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল।আকাশ এটাকে সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়ে বলা শুরু করল।
আকাশ: ওইদিন ঘটনা চক্রে আমিও ওই পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম। পেশায় একজন ডিটেকটিভ হলেও ঘুরে বেড়ানো আমার নেশা। ওইদিন আমার ক্যামেরা নিয়ে ছবি তোলছিলাম চারদিকে। এমনি সময় আমার ক্যামেরায় ভেসে উঠে ওই মূহর্তের ছবি,আমিও দেরী করি নি।ক্যামেরা বন্দী করে নিয়েছি। তারপর আপনার সম্পর্কে সব ডিটেলস নিয়েছি।তাই তো দেরী হলো এতোদিন।
জহির: ভালোই ইনফরমেশন নিয়েছেন আপনি। তা তার পর কী করলেন???
আকাশ: তারপর আর কী??? আপনার বাসার ঠিকানা নিলাম, পুলিশকে ইনফর্ম করে আপনার কাছে আসলাম যাতে সব আগেই স্বীকার করাতে পারি। এই তো আর দশ মিনিটের মধ্যে পুলিশ চলে আসবে।
জহিরের মস্তিষ্ক দ্রুত চলতে লাগল। শফিককে মারার পর সে এতো বড় দায়িত্ব পেয়েছে, পেয়েছে প্রচুর টাকা। এখন এই মামুলি একজন ডিটেকটিভ তার সব খেলা শেষ করে দিবে এটা সে মানতে পারবে না,না কখনও পারবে না।
আকাশ পুলিশকে ইনফর্ম করার জন্য মোবাইলটা হাতে নেওয়ার আগেই তার উপর ঝাপিয়ে পড়ল জহির। কারণ মানুষ প্রথম বার যখন খুন করে তখন তার হাত কাপে আরও কতো কিছু হয়।কিন্তু একবার যখন খুন করে ফেলে তখন সেটা তাকে নেশা ধরিয়ে দেয়। তখন খুন করতে আর সমস্যা হয় না। জহির একটা খুন করেছে, তাই আকাশের গলা চেপে মেরে ফেলতে তার হাতও কাপল না। কারণ আকাশই এখন একমাত্র প্রমাণ তার বিরুদ্ধে। আকাশ মারা গেলে সব প্রমান শেষ। আকাশ ধরফর করতে করতে মারা গেল। জহিরের ভাবল পাঁচ মিনিট আছে আর, পালাতে হবে এখন।
কিন্তু ও কী জানত যে আকাশের শার্টের বোতামে লাগানো ক্যামেরায় তাদের সব কথাবার্তা রেকর্ড হয়েছে???
[কেমন লাগল??? ভুল নজরে এলে দয়া করে বলবেন]