চট্রগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠেছি।আমার আবার বাসের থেকে ট্রেনের জার্নি'টা ভালো লাগে।সাথে ভাবি ও আছে।আমার নিজ বাড়ি ঢাকা তে পড়ালেখার জন্যে চট্রগ্রামে পরিবার ছাড়া একা থাকতে হয়।আমি চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছি।হয়তো লেখাপড়ার চ্যাপ্টার টা এবার বন্ধ হয়ে যাবে।ফ্যামিলি আগে থেকেই চায় না পড়ালেখা করি। বিয়ের জন্য উঠে পরে লেগেছে সবাই।
ভাবি কে পাঠিয়েছে আমাকে বুঝিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ভালো বেতনের জব করে।দেখতে শুনতে ভালোই। ব্যস এতোটুকুই জানি তার সম্পর্কে। ছেলের নাকি আমাকে দেখে অনেক পছন্দ হয়েছে। ভাইয়ার মোবাইলে আমার ছবি দেখেছে।এখন আমাকেই বিয়ে করবে।
মাঝে মাঝে এমন মানুষদের দেখলে রাগে গা জ্বলে।চেনা নাই জানা নাই ছবি দেখেই ফিদা হয়ে যেতে হবে।দুই মাস থেকে আমার পরিবার ও জ্বালিয়ে খাচ্ছে,এই ছেলে কে একবার দেখ।পছন্দ হবে হাবিযাবি।
বিয়ের মতো একটা সিরিয়াস ডিসিশন কেউ এভাবে নেয়। মনের মধ্যে এমন হাজার টা কথা নিয়ে ভাবছিলাম তখনি ভাবি আমাকে ধরে একটা ঝাকি দিলো,,,,
-এই সেহরিন
-হ্যা, হ্যা ভাবি,,,
-কখন থেকে ডাকছি তোকে
-বলো শুনছি। কই শুনচিস,তুই তো অন্য কোথাও হারিয়ে গেছিস,সাজিদ কে তোর অনেক পছন্দ হয়েছে তাই না ওর কথা ভাবচিস বসে বসে।
--not at all আমি কাউকে নিয়ে ভাবছি না। আর তোমাদের পছন্দ করা ছেলেকে নিয়ে তো একদমই না।
-না ভাবলে এখন থেকে ভাব।দেখ মেয়ে মানুষ আজ হোক কাল হোক বিয়ে করতেই হবে,,
- প্লীজ ভাবি এখানে শুরু করিও না।জানোই তো আমি বাস ট্রেন কিংবা রাস্তায় বা কারো সামনে ব্যাক্তিগত কোনো কথা বলা লাইক করি না।
-- You're so boring Sehrin
ভাবি ভেংচি কেটে অন্য পাশে ফিরে মোবাইল টিপতে লাগলো। আমার বেশি কথা বলা একদম অপছন্দ। আর ভাবি একবার কথা বলা শুরু করলে নিশ্বাস নেওয়ার জন্যে হলেও থামবে না। ট্রেনে যে বগিটায় আমরা ছিলাম সেখানে তেমন যাত্রি নেই আমাদের বাম পাশের সিটে এক জন বৃদ্ধা আর বৃদ্ধ ছিলো।আর তেমন যাত্রি নেই। মোবাইলের স্কীনে তাকিয়ে দেখলাম রাত ১০টা বাজছে,ট্রেন ধীর গতিতে চলছে। অনন্য বগি থেকে অনেক শোরগোল শোনা যাচ্ছে। তাই আমি ইয়ারফোন বের করে ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে দিলাম।আর জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পরেই টের পেলাম ট্রেন কোনো একটা স্টেশনে থামছে।গান শুনতে শুনতে চোখ বন্ধ হয়ে আসছিলো আমার।
এই এক সমস্যা আমার সহজে ঘুম আসে না।কিন্তু গান শুনলে চোখে রাজ্যের ঘুম এসে জড়ো হয়। চোখ বন্ধ হলেও বুঝতে পারছিলাম ভাবি সিট থেকে উঠে কোথাও গেছে।আমার ভাবি আবার চটপটে স্বভাবের। মুখ বন্ধ রেখে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারে না।হয়তো ভাবির মতোই কোনো বাচাল টাইপ মহিলা কে খুজছে,,। অনেক্ক্ষণ কেটে গেছে ভাবি চলে গেছে,আমি চোখ বন্ধ রেখে বুঝতে পারছি সব।কিন্তু চোখ মেলে তাকাতে ইচ্ছা করছে না। ধীরে ধীরে ট্রেনের মধ্যের সব শোরগোল কমতে শুরু করলো।একেবারে নিঝুপ নিস্তব্ধ সব।শুধু ট্রেন চলার ঝনঝন শব্দ হচ্ছে।
চোখ বন্ধ রাখা অবস্থায় ও বারবার মনে হচ্চে আমার ভাবি এ ট্রেনে থাকা সত্তেও এতো নিশ্চুপ হয় কি করে সব। বেশিক্ষণ আর চোখ বন্ধ করে থাকতে পারলাম না।একটা ভ্যাপসা গন্ধ নাকে এসে লাগতেই চোখ মেলে তাকালাম।আর তাতেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম।আমার ঠিক সামনেই একটা মেয়ে বসা।আমার দিকেই একমনে চেয়ে আছে। পলকহীন ভাবে চেয়ে আছে আমার দিকে।মেয়েটা শাড়ি পরা,হলুদ শাড়ি,আর চুল গুলা খোপা করা অবস্থায়।বয়স ২৮-৩০ এর হবে।চোখে গাঢ় কালো কাজল দেওয়া। কিন্তু মেয়েটা আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো। আরো বেশি অবাক হয়ে গেলাম যখন দেখলাম ভাবি পাশে নেই।ট্রেনের মধ্যে শুধু একটা মাত্র লাইট জ্বালানো। আর বাম পাশের সিটে যে বৃদ্ধা আর বৃদ্ধ লোকটা ছিলো তাদের ও দেখতে পাচ্ছি না। কি করবো বুঝতে পারছি না।ভাবি'টা কোথায় গেলো।আর সামনের সিটে বসে থাকা মেয়েটাই বা কখন আসলো।যখন স্টেশনে ট্রেন থেমেছে,তখন উঠেছে হয়তো। কথাটা মনে মনে বলে আড়চোখে মেয়েটার দিকে তাকালাম।
ট্রেনে এখন একটা থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।মোবাইলের স্কিনে তাকিয়ে দেখলাম ১২ঃ৩০ বাজছে।আমি ভাবির নাম্বারে কল দিতে যাবো তখনি সামনে বসে থাকা অদ্ভুত মেয়েটা বলে উঠলো " কোথায় যাচ্ছেন?"
-মেয়েটার প্রশ্নে মোবাইল'টা হাতের মধ্যে চেপে রেখে বললাম "ঢাকায় যাচ্ছি"
"বিয়ে করতে?"
কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি। আমতা আমতা করতে থাকলাম তখনি "মেয়েটা বললো কিছু মনে করো না তোমাকে একা দেখে ভাবলাম বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছো প্রেমিকের কাছে।
অদ্ভুত এই মেয়ের কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলাম না,চিনে না জানে না তুমি করে বলছে,আর কি সব কথা বলছে। মেয়েটা আমাকে আবারো চমকে দিয়ে বললো,,,,
-তুমি আমার ছোট হবে অনেক বয়সে তাই তুমি করে বললাম।
অদ্ভুত ধরনের এই মেয়ের কথায় একটু হেসে সম্মতি দেওয়া ছাড়া আর কিছু বলতে পারলাম না।কিন্তু মেয়েটা এমন অস্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে আছে কেনো। চোখের পাপড়ি ও নড়ছে না।আমার অনেক অস্বস্তি হতে লাগলো।চলন্ত ট্রেন থেকে কিভাবে অন্য বগি গুলোতে যেয়ে ভাবি কে খুজবো।মোবাইল বের করে কল দিলাম ভাবির নাম্বারে কিন্তু ভাবির নাম্বার বন্ধ।
হঠাৎ ভাবির মিসিং হয়ে যাওয়া আর ফোন বন্ধ নিয়ে অনেকটা টেনশনে পরে গেলাম।এদিকে সামনের সিটের সেই অদ্ভুত মহিলা'টা আমার দিকে পলকহীন চোখে এখনো তাকিয়ে আছে। আমি আর কথা চেপে রাখতে পারলাম না। একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলাম " আপনি কি আমার ভাবি কে দেখেছেন?আর আমাকে কি চিনেন আপনি?
আমার কথা শুনে এবার মহিলাটা একটু নড়ে বসলো,তারপর জানালার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ,,, আমি অদ্ভুত এই মহিলার উত্তরের আশায় তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
এবার মেয়েটা সোজা আমার দিকে তাকিয়ে বললো" তোমাকে চিনি না আমি।কিন্তু তুমি অনেক সুন্দর অনেক বেশি সুন্দর।আমি মেয়ে হয়েই চোখ সরাতে পারছি না।
মেয়েটার কথা শুনে আরো বেশি অস্বস্তি হতে লাগলো আমার।এবার মেয়েটা চেহারায় একটা শক্ত ভাব এনে বললো" এতো বেশি সুন্দর কেনো হলে?অন্য মেয়েদের ঘর ভেঙে যেতে পারে তোমাদের জন্যে"
মেয়েটার বলা সব কথা আমাকে বারবার চমকে দিচ্ছে। কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনি ট্রেন ধীরে ধীরে থেমে যেতে লাগলো।আমি এই সুযোগে সিট থেকে উঠে দাড়ালাম। এখন ভাবি কে অন্য বগি গুলোতে ভালো করে খুজতে হবে।ট্রেন থেকে নেমে অন্য বগি গুলোতে যেয়ে অবাক হয়ে গেলাম পুরো ট্রেন ফাকা কোনা মানুষের অস্তিত্ব নেই। মুহূর্তেই আমার মধ্যে অজানা একটা ভয় কাজ করলো।ট্রেন থেকে নেমে একেবারে ড্রাইভারের সিটে গিয়ে যা দেখলাম তা দেখে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো। ট্রেনে কোনো চালক নেই।এ কোন জায়গায় এসে পরলাম আমি। ভয়ে থরথর করে কাপছি।মোবাইল বের করে আবারো ভাবি কে কল দিতেই কাছে কোথাও রিং বাজতে লাগলো।আমি সামনে এগিয়ে গেলাম। মনের মধ্যে অনবরত হাতুড়ি পেটার মতো শব্দ হচ্ছে।কেনো জানি সামনে এগোতে আর ইচ্ছা হচ্ছে না।মনে হচ্ছে খুব খারাপ কিছু আমার চোখে পরবে।যা দেখে আমি সহ্য করতে পারবো না।
(চলবে)
নতুন গল্প "রহস্যময় ট্রেন"।আশা করি সবাই গল্পটি পছন্দ করবেন।সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো।তাহলেই গল্পের পরবর্তী পর্ব পোস্ট করবো।ধন্যবাদ সবাইকে।