ম্যানচেষ্টার শহরে আজ একটু বেশি ঠান্ডা পড়েছে।তুষার পড়তেছে তাইলে তো ঠান্ডা বাড়বেই।তুষার পরে চারিদিকে সাদা হয়ে আছে।প্রকৃতি যেন সাদার চাদরে ঢেকে গেছে।ইংল্যাণ্ডের অনেক শহরেই তুষার পড়ছে কিন্তু ম্যানচেষ্টারে যেন তুষার বেশি পড়তেছে।তুষার পড়ার এই ধারনা আমি নিজে মন থেকে ভেবে বলছি এটার সত্যতা কতটুকু তা জানি না আর জানতে চাইও না।কারণ নিজের মন আমায় যা বলছে আমি তাই বিশ্বাস করি।নিজের মনের বিশ্বাসেই আজ আমি খুন করব।হ্যা আমি খুন করবো।
আমি জন মাইকেল তুষারময় এক বিকেলে ম্যানচেষ্টার শহরে আমার বাড়ির পাশে একটি বাগানে বসে আছি।হাতে আমার একটা ছুরি।একটা মারাত্তক কাজ করার আগে আমি এই বাগানে বসে আছি।বাগানটাও পুরো ফাকা।কেউ নেই আশেপাশে।তুষারপাত যেন সবাইকে নিজ ঘরে বন্দি করে রাখছে।শুধু আমি একা বাগানটায় বসে আছি।হঠাৎ একটা হিমেল হাওয়া শরীর ভেদ করে যেন চলে গেল।এই হাওয়ায় যে কারো শরীর কাপবে কিন্তু আমার শরীরে যেন আজ কোনো শীত তেমন একটা কাবু করতে পরছে না।খুন করার নেশা যেন আমার শরীর কে গরম এর উপর গরম করছে আর আমি যেন সেই গরমের তাপ দিয়ে চারিদিকে সব পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিবো।খুন নামক ভয়াবহ এই কাজটা করবো আমার খুব কাছের মানুষটার উপর।আমি খুনটা করবো আমার ভালোবাসার মানুষকে আমার স্ত্রী সোফিয়া জর্ডান কে।
আট বছর আগে.........
সোফিয়া আর আমি প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম।আমাদের অনেক সুখের সংসার ছিল।বিয়ের এক বছর পর আমাদের একটা ছেলে হয় তার নাম আমরা রাখি জাস্টিন।জাস্টিন এর বয়স যখন তিন বছর তখন একটা কার এক্সিডেন্টে আমার ছেলে জাস্টিন মারা যায়।কিন্তু বিধাতার কি লিলাখেলা যে আমি এবং আমার স্ত্রী সোফিয়া বেচে যাই।জাস্টিন কে এভাবে হারিয়ে আমারা দুজন প্রচণ্ড ভেঙ্গে পড়ি।বিধাতার কাছে বার বার বলি কেন আমাদের ছেলেকে নিয়ে গেলে আমাকে কেন নিয়ে গেলে না।জাস্টিনের এর শোকে আমরা সব সময় কান্না করতাম।জাস্টিন মারা যাওয়ার পর আমাদের জীবনে যেন সকল রং হারিয়ে গেছে। আমরা দুজন বাস করছি যেন রংহীন একটি অন্ধকার প্রথিবীতে।তারপর অনেকদিন চলে গেছে।
জাস্টিন মারা যাওয়ার ও চার বছর হয়ে গেছে।তারপর আমাদের আর বাচ্চা হয় নি।এর মধ্যে আবার জাস্টিন মারা যাওয়ার দুই বছর পর আমার স্ত্রী সোফিয়া স্ট্রোক করে প্যারালাইসিস হয়ে যায়।সে আর চলাফেরা করতে পারে না। সারাদিন ঘরে শুয়ে থাকে।সোফিয়ার সকল দেখভাল এখন আমাকেই করতে হয়।ছেলে হয়ে মেয়েদের সকল কাজ করতে হয়।তাছাড়া সোফিয়ার চিকিৎসার খরচ ওষুধের খরচ মেটানো আমার ছোট খাট চাকরি দ্বারা আর সম্ভব হচ্ছে না।সোফিয়ার এভাবে সব সময় ঘরে পড়ে থাকা আমাকে এখন বিরক্ত করে তুলেছে ওর উপর।সোফিয়ার প্রতি আমার ভালোবাসাটাও যেন আর নেই।আমি একেবারে আর সহ্য করতে পারছি না সোফিয়া কে।তাই আমি খুন করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।ওরে খুন করে সারাজীবনের মতো শান্তি দিয়ে দিবো হাহাহাহাহাহাহাহাহা।
সূর্য ডুবে যাচ্ছে চারদিকে আধার হয়ে আসছে। তুষার পরার গতি আরো বেড়ে যাচ্ছে।তুষার পড়ার জন্য আমার কালো জ্যাকেট টা সাদা হয়ে গেছে।নাক দিয়ে পানি পড়ছে।এবার হাতে থাকা ছুড়িটার দিকে তাকালাম।পরিষ্কার এই ছুড়িটা একটুপর সোফিয়ার রক্তে লাল হয়ে যাবে।
তো এবার আমি উঠলাম।আস্তে আস্তে হাটছি বাড়ির দিকে।মনের মধ্যে খালি খুনের নেশা ঘুরে বেড়াচ্ছে।একটুপর বাসার সামনে চলে আসলাম।দুতালা বাড়িটা যেন আজ নিশ্চুপ হয়ে আছে যেন বাড়িটার ও আজ মৃত্যু ঘটবে।বাড়িটার চার দেওয়ালের প্রতিটা কোণায় কোণায় আমার আর সোফিয়ার ভালোবাসা মিশে আছে।আর আজ আমার জন্য কিনা সোফিয়ার রক্তে এই বাড়িটাও রক্তাক্ত হয়ে যাবে।যাই হোক বাড়ির মধ্যে ঢুকলাম।এর মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।শিড়ি বেয়ে উপরের তলায় যাচ্ছি কারণ সেখানেই যে অসাড় এক দেহ নিয়ে শুয়ে আছে সোফিয়া।এক পা দু পা করে শিড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম।এবার পৌছে গেলাম আমাদের ঘরে।ওই তো শুয়ে আছে সোফিয়া।আমায় দেখে সোফিয়া বললো
সোফিয়া:-তুমি কোথায় ছিলে?জানালা দিয়ে দেখলাম বাইরে অনেক তুষার পড়ছে তাই কিছু কাঠ নিয়ে এসে ঘরের ফায়ার প্লেসটা জ্বালিয়ে দাও অনেক ঠান্ডা লাগছে।আর আমায় দুপুরের ঔষুধ না খাইয়ে তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে?
সোফিয়ার কথায় আমি কোনো জবাব দিলাম না।চুপ করে এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
সোফিয়া:-কি হলো কথা বলছো না কেন মাইকেল?
আমি:-সোফিয়া তোমার অনেক কষ্ট তাই না?তোমার সকল কষ্ট আজ আমি শেষ করে দিবো।এই সাদা তুষার প্রকৃতির চারিদিকে সাদা করে দিছে কিন্তু আমি তোমার রক্তে সব লাল করে দিবো।লাল রক্তে ভেসে যাবে এই ঘর,ভেসে যাবে এই ম্যানচেষ্টার শহর হাহাহাহা।
সোফিয়া:-এসব কি বলছো তুমি?তোমার মাথা ঠিক আছে তো।
আমি:-আমার মাথা ঠিকই আছে।সোফিয়া এই যে দেখো আমার হাতে ছুড়ি।এই ছুড়ি তোমায় শান্তি দিবে অনেক শান্তি দিবে তোমার আর কোনো কষ্ট থাকবে না।গভির ঘুমে তুমি আছন্ন হয়ে যাবে।
এই বলে সোফিয়াকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হাতের ছুড়িটা সোফিয়ার পেটে চালিয়ে দিলাম।ছুড়ি বার করছি আবার ঢুকিয়ে দিচ্ছি পেটে এভাবে নয় দশবার সোফিয়ার পেটে ছুরি চালিয়ে দিলাম।তারপর ক্লান্ত হয়ে সোফিয়ার পাশে বসে পড়লাম।
বাইরে চরম আকারে তুষার পড়ছে।হাড়কাপানো ঠান্ডা চারিদিকে গ্রাস করছে।কিন্তু আমি যেন গরমের উষ্ণতায় ঘামছি এবং আমার পুরো মুখ সোফিয়ার লাল রক্তে ভরে আছে।সোফিয়া গভির ঘুমে আছন্ন হয়ে গেছে।প্রাণ বেরিয়ে গেছে সোফিয়ার।সোফিয়ার পেট থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।মনে হচ্ছে যেন লাল রক্তের ঝর্ণা বয়ে যাচ্ছে।আর সেই ঝর্ণার লাল রক্তে পুরো ঘর যেন ডুবে যাচ্ছে।আর আমি তো এটাই চেয়েছিলাম যাতে সোফিয়াকে সারাজীবনের জন্য ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারি।সোফিয়ার পেটে ছুড়ি চালানোর সময় ওহ চিৎকার করে নি বরং এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।মনে হয় ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে এমন কিছু সে আশা করে নি।কষ্টটা মনে পেয়েছে তাই শারীরিক কষ্ট তার বোধ হয় নি।সোফিয়া মারা গেলেও তার দুই চোঁখ এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে।চোঁখদুটোর মধ্যে কেমন একধরনের মায়া যেন ঘুরছে।আস্তে আস্তে যেন তার চোঁখের মায়াটাও বের হয়ে যাচ্ছে এবং তার সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে আমার সাথে সোফিয়ার সকল স্মৃতি,হারিয়ে যাচ্ছে দুজনের একসাথে পথচলা ও হারিয়ে যাচ্ছে দুজনের ভালোবাসা মৃত্যু নামক এক ঠিকানায়।