আমি আর আমার স্ত্রী সুমি কিছুক্ষণ থেকে প্রধান শিক্ষকের রুমে বসে আছি। আমাদের ক্লাস থ্রি'তে পড়া ছেলের ব্যাপারে আমাদের স্কুলে ডেকে আনা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক কিছু বলছেন না কারন আমাদের ছেলে রিফাত এখনো ক্লাসে। রিফাত এলেই হয়তো কিছু বলবেন।
কিছুক্ষন পরে রিফাত আসলো।
প্রধান শিক্ষক এবার বেশ কড়া গলায় জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা বাচ্চাকে কি শেখাচ্ছেন?
আমি প্রায় আমতা আমতা করে উত্তর দিলাম, স্যার কি হয়েছে?
পাশ থেকে আমার স্ত্রী বলে উঠলো, স্যার রিফাত কি কিছু ভুল করেছে?
রিফাত কোন ভুল করে নি। ভুল তো করছেন আপনারা। যদিও কথাগুলো আমার বলা ঠিক হচ্ছে না তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি। সন্তানের সামনে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা আপনাদের মাথায় রাখা উচিত।
স্যার কি হয়েছে? দয়া করে একটু খুলে বলুন।
স্যার কিছুক্ষন ঘাটাঘাটি করে টেবিল থেকে একটা খাতা বের করলো।
স্যার বললো, এইটা আপনার ছেলের বাংলা খাতা। সেখানে গরু রচনা লিখতে বলা হয়েছিলো।
আপনার ছেলে কি লিখেছে জানেন?
আমাকে জিজ্ঞাসা করেই তিনি রিফাতকে ডাকলেন।
খাতাটা রিফাতের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, রিফাত এইযে এইখান থেকে তোমার বাবা মা কে পড়ে শোনাও তো।
রিফাত পড়তে লাগলো, গরু একটি গৃহপালিত প্রানী। গরুর চার পা ও একটি লেজ আছে। আমার আম্মুও মাঝে মাঝে আমার বাবাকে গরু বলে ডাকে। যখন বাবা বাজার থেকে ফিরে আসে তখন আম্মু বলে, বাজারটাও ঠিকমতো করতে পারো না। তোমার বুদ্ধি একদম গরুর মতো। শুধু লেজটা নেই।
সেইদিন আম্মু আব্বুকে বললো, সারাদিন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তো একটা গরু হচ্ছো। আম্মুর কথা শুনে আমি আব্বুর কাছে গিয়ে দেখতে লাগলাম আব্বুর লেজ হয়েছে কি না। আব্বুর তো দুইটা পা দুইটা হাত। আব্বুর লেজও নেই। তাহলে আব্বু গরু কিভাবে হয়।
একবার আম্মুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আম্মু আব্বু কিভাবে গরু হয়? আব্বুর তো লেজ নেই? আম্মু বলেছিলো, বাবার মতো আমিও নাকি গরু। কিন্তু আমারো তো চার পা আর লেজ নেই। আমি কিভাবে গরু হলাম?
এতটুকু পড়ার পর প্রধান শিক্ষক রিফাতকে থামিয়ে দিলো। এদিকে লজ্জায় আমার প্রান যায় অবস্থা। একবার আড়চোখে বৌ এর দিকে তাকালাম বেচারি লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। বৌ যদি জানতো তার গরু ডাক তার পুত্র পরীক্ষার খাতায় লিখে আসবে!
যাই হোক ছেলের সামনে আর আমাকে গরু ডাকতো না।
প্রধান শিক্ষক বললেন, আপনাদের লজ্জা দেওয়া আমার উদ্দেশ্য না। ছেলেকে বাসায় একাডেমীক শিক্ষা দেওয়ার দরকার নেই সেই দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু চারিত্রিক শিক্ষাটুকু যেন সঠিক ভাবে পায় সেই দায়িত্ব কিন্তু আপনাদের। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। এই অনুকরণ হয়তো একদিন তাদের চরিত্রে প্রবেশ করবে। তাই শিশুদের সামনে অন্তত ভালো ব্যাবহার করুন।
সেইদিন প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে রিফাতকে নিয়ে বাসায় চলে আসি। রিফাতের গরু রচনার জন্যই হোক আর প্রধান শিক্ষকের কথার জন্যই হোক সেদিন থেকে বৌ আর আমাকে গরু বলে ডাকে নি।