শেষে কী হলো?’
নিকিতার এই প্রশ্ন শুনে রেঙ্গুন দাদি হঠাৎ খেঁকিয়ে উঠলেন, ‘শেষের কথাডা যে আগে জিগায়, তার লগে আমার কুন কিস্সা নাই...।’
রাগলে রেঙ্গুন দাদির ফরসা গাল টুকটুকে লাল হয়ে ওঠে। তখন আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। আসর ছেড়ে উঠে যাচ্ছিলেন। রোকন, শিহাব সবাই মিলে ঘিরে ধরল তাঁকে, ‘সরি দাদি, ভুল হয়ে গেছে, তা ছাড়া নিকিতা তো নিয়মকানুন জানে না, এবারের মতো মাফ করে দাও...।’
ছোট্ট নিকিতা বিদেশে থাকে। বেড়াতে এসেছে কয়েক দিন আগে। রোকন আর শিহাবের খালাতো বোন। বেচারি এই প্রথম রেঙ্গুন দাদির গল্পের আসরে বসেছে, তাই ফস্ করে কী বলতে কী বলে ফেলেছে। এখন সে গোমড়া মুখ করে বসে আছে। রোকন বলল, ‘সরি বল নিকিতা, দাদিকে সরি বল।’
ধমক খেয়ে নিকিতার চোখে জল টলমল। কাচুমাচু মুখে দাদির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘সরি, দাদি।’
সবাইকে চমকে দিয়ে দাদি বললেন, ‘ইটস অল রাইট।’ তারপর নিকিতাকে টেনে নিয়ে কোলে বসালেন। আদর করে গাল টিপে দিয়ে বললেন, ‘কিছু মনে করিস না বোন, আমার তো বয়স হয়েছে, তাই একটু মাথা গরম। গল্প বলার সময় কেউ উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করলে মেজাজ নষ্ট হয়ে যায়।
গল্প আবার শুরু হলো।
‘কাকজ্যোত্স্না কাকে বলে, জানিস?’
রোকন, শিহাব, মিশু একে অপরের দিকে তাকায়। শব্দটা শুনেছে, কিন্তু অর্থটা ঠিক জানে না।
‘জ্যোত্স্না রাতে চাঁদের আলোয় যখন আকাশ ফরসা হয়ে যায়, তখন কাকেরা মনে করে বুঝি ভোর হয়ে গেল। তারা কা কা ডাকতে শুরু করে। এ রকম জ্যোত্স্না রাতকে বলে কাকজ্যোত্স্না।’
রোকনের বন্ধু মিশু আবার সবকিছুতে সহজে মুগ্ধ হয়ে যায়। দাদির কাছে কাকজ্যোত্স্নার কথা শুনে বলল, ‘বাহ্, কী সুন্দর!’
দাদি খুশি হলেন তার কথা শুনে। তাঁর মুখে ফুটে উঠল একটা তৃপ্তির ভাব। বললেন, ‘এ রকম এক কাকজ্যোত্স্নার রাতে গুমাই বিলে নেমে এল ১৭টি ফুটফুটে পরি...।’রকম এক কাকজ্যোত্স্নার রাতে গুমাই বিলে নেমে এল ১৭টি ফুটফুটে পরি...।’
‘পরি!’ নিকিতার মুখটা হাঁ হয়ে গেল।
‘গুমাই বিল তো রাঙ্গুনিয়ায়, তাই না?’ শিহাব জিজ্ঞেস করল।
‘হ্যাঁ, রাঙ্গুনিয়ায়। এই বিলকে বলে চট্টগ্রামের শস্যভান্ডার।’ সেই বিলের এক প্রান্তে বড় বড় পাহাড় আছে না? সেই পাহাড়ের ঝোপঝাড় ঘন জঙ্গলের মধ্যে থাকে এক দঙ্গল ভূত!’
‘ভূত!’ দাদির হাতটা খামচে ধরে ভয়ার্ত গলায় জিজ্ঞেস করে নিকিতা।
‘হ্যাঁ, ভূত। আচ্ছা ভূতের কথা পরে বলব। আগে পরিদের কথাটাই বলি। তো, কাকজ্যোত্স্নায় আকাশ থেকে গুমাই বিলে নেমে এল ১৭টা পরি।’
‘পরিরা দেখতে কেমন?’—নিকিতার কৌতূহল একটু বেশি। সে তো আগে কখনো দাদির কাছে গল্প শুনতে বসেনি, তাই সবকিছুতেই প্রশ্ন জাগে তার মনে।
দাদি বললেন, ‘পরিরা দেখতে “সেই রকম” সুন্দর! তোমার মতো, তয় তুমার ত ডানা নাই, তাদের দুইখান সোন্দর ডানা আছে...।’
পরির সঙ্গে তুলনা করায় নিকিতা খুব খুশি, তবে একটু লজ্জাও পেল।
গল্প আবার শুরু হলো: গুমাই বিলে তখন ধান কাটা হয়ে গেছে। বিরাট মাঠজুড়ে আনন্দে নেচে নেচে গান গাইতে শুরু করল পরিরা। ওই যে একটা গান আছে না... ‘মোমের পুতুল, মমির দেশের মেয়ে নেচে যায়...।’
রোকন ভেবেছিল চুপচাপ থাকবে, কিন্তু হঠাৎ একটা প্রশ্ন আকুলি-বিকুলি করে ওঠে মনের ভেতর। সে জিজ্ঞেস না করে পারে না, ‘পরিরা কি বাংলা গান গাইতে পারে?’
প্রশ্ন শুনে একটু হকচকিয়ে গেলেন বোধ হয় রেঙ্গুন দাদি, এক মুহূর্ত চুপ করে কী যেন ভাবলেন, তারপর বললেন, ‘পারে, ওরা যখন যে দেশে যায়, সেই দেশের ভাষায় গান গাইতে পারে।’
‘তারপর?’ মিশু একটু অধৈর্য হয়ে শুধায়।
‘তো তারা তো নেচে নেচে গান গাইছে, কোনো দিকে খেয়াল নেই...এদিকে সেদিন আকাশে হঠাৎ মেঘ জমে উঠেছে, সেই মেঘ এসে যখন চাঁদটা ঢেকে দিল, তখন হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। ওরা তো অন্ধকারে দেখতে পায় না, ভয়ে নাচ-গান বন্ধ করে ডানা ঝাপটে যে যেদিকে পারে দিগিবদিক ভুলে উড়তে শুরু করল...।’
‘তারপর?’ মিশু তাড়া দেয় দাদিকে।
দাদি বললেন, ‘দাঁড়া, একটু পান খাইয়া লই।’চার জোড়া চোখ নিষ্পলক তাকিয়ে আছে দাদির দিকে। দাদি তাঁর রুপালি পানের বাটা থেকে পান বের করেন, তাতে চুন আর খয়ের লাগিয়ে মুখে দিলেন। একটা কৌটা থেকে সুগন্ধি জর্দা বের করে মুখে পুরলেন এক চিমটি। পান আর জর্দার গন্ধে ভরে গেল ঘরটা। খানিকটা চিবিয়ে জিব দিয়ে ঠেলে মুখের এক কোণে পানটা রেখে আবার বলতে শুরু করলেন গল্পটা: তো হুড়োহুড়ি করে উড়ে গেল সবাই। অনেক দূরে, আকাশের একেবারে কাছাকাছি গিয়ে তারা দেখল ১৬ জন আছে, একজন নেই। কে নেই? কে নেই?—সবচেয়ে সুন্দরী বলে যার নাম রূপকুমারী, সেই রূপকুমারীকে পাওয়া যাচ্ছে না। রূপকুমারী আবার পরিদের রানি ফুলকুমারীর মেয়ে। ভয়ে পরিদের বুক শুকিয়ে যায়। রানির আদরের ধন হারিয়ে গেছে, কারোর তো আর রক্ষে নেই। তখন পরিদের চোখের জলে বৃষ্টি নামে পৃথিবীর বুকে।নিকিতা এতক্ষণ মাথা ঘুরিয়ে করুণ চোখে অপলক তাকিয়ে ছিল দাদির মুখের দিকে। এখন পরিদের দুঃখে তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।
‘তারপর?’ আবার মিশুর প্রশ্ন।
দাদি আবার পান চিবিয়ে নিলেন খানিকটা, আবার জিব দিয়ে ঠেলে পানটা মুখের এক কোণে পাঠিয়ে দিয়ে শুরু করলেন: এদিকে সারা গুমাই বিলে যখন নেমে এসেছে গভীর অন্ধকার, তখন পাশের পাহাড়ের ঝোপজঙ্গল থেকে মহানন্দে ভূতেরা নেমে এল সেখানে। কালো কালো কদাকার ভূতগুলোর সারা শরীরে বড় বড় লোম। কুতকুতে চোখগুলো অন্ধকারের মধ্যে জ্বলছে জোনাক পোকার মতো। আনন্দে নৃত্য করতে শুরু করল ওরা। নাচতে নাচতে হঠাত্ এক ভূত দেখতে পেল রূপকুমারীকে। বেচারি এমনিতেই অন্ধকারে দেখতে পায় না, তার ওপর ওদের কিম্ভূত সৃষ্টিছাড়া গান শুনে ভয়ে জড়সড় হয়ে মাঠের এক কোণে বসে আছে। ওকে দেখতে পেয়ে দলের সরদারকে জানাল ভূতটা। সরদার নিজেও দেখল। রূপকুমারীর মায়ামাখা মুখ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল ভূতের সরদার, বলল, ‘খবরদার, ওর গায়ে কেউ হাত দিবি না।’ এমনিতেই এই ভূতগুলো মাংসাশী নয়, শুধু মাছ খায়। তবে অন্ধকারের মধ্যে যাকে পায়, মানুষ হোক, গরু-ছাগলই হোক বা পরিই হোক, সবাইকে আঁচড়ে-কামড়ে দেয়। সরদারের কথায় কেউ কোনো ক্ষতি করল না রূপকুমারীর।
ভোরের আলো ফোটার আগেই রূপকুমারীকে নিয়ে পাহাড়ের জঙ্গলে ফিরে গেল ওরা। সরদারের মনে কী আছে, অন্য ভূতেরা তা জানে না। ওরা মাছ এনে খেতে দেয়, ফুলকুমারী মাছের গন্ধে ওয়াক তোলে। গাছের ফলমূল এনে দেয়, এক কামড় খেয়ে বাকিটা ফেলে দেয় আর দিন-রাত শুধু কাঁদে।
একদিন ভূতের সর্দার ঘোষণা করল, আমি রূপকুমারীর সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে দেব।
আঁতকে ওঠে নিকিতা বলল, ‘ভূতের সঙ্গে পরির বিয়ে?’দাদি রহস্যময় হাসিতে মুখ ভরিয়ে বলল, ‘এখানেই তো আসল গল্প, ভূতের সঙ্গে পরির বিয়ে...।’
নিকিতা বলল, ‘না, এটা ঠিক হলো না, দাদি...এত সুন্দর একটা পরির সঙ্গে...।’
‘আরে বাবা, বিয়েটা তো আর আমি ঠিক করি নাই। রূপকুমারী এখন ভূতের হাতে বন্দী, তারা যা খুশি করবে...আমার কী করার আছে?’
‘আমি আর গল্প শুনব না।’ নিকিতা উঠে দাঁড়ায়।
‘আরে বসো বসো, দাদু, এত বেজার হলে কী চলে?’
শিহাব ধমক দেয়, ‘চুপ করে বোস, নিকিতা, কে বলেছে তোকে গল্প শুনতে আসতে?’
দাদি আদর করে আবার কোলে বসায় নিকিতাকে। তারপর আবার শুরু করে: এক অমাবস্যার রাতে রূপকুমারীর সঙ্গে ভূতের সরদারের ছেলের বিয়ে হয়ে গেল।
‘উফ্!’—বলে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে নিকিতা।
দাদি একটু হেসে আবার শুরু করল:
বিয়ের পর সরদারের ছেলে রূপকুমারীকে বলল, তুমি কি আমাকে ঘেন্না করো, রূপা? রূপকুমারী বলল, হ্যাঁ, করি। সরদারের ছেলে বলল, আমার সব কথা শুনলে আর ঘেন্না করবে না। কী কথা? ভূত-সরদারের ছেলে বলল, আমি আসলে ভূত না।
এবার আবার কৌতূহলী হয়ে উঠল নিকিতা। বাকিদের চোখেও বিস্ময়। এ রকম টানটান উত্তেজনার সময় দাদি বললেন, ‘আরেকটা পান খাইয়া লই।’
আবার মুখে পান দিলেন দাদি, আবার জর্দার গন্ধে ভরে গেল ঘরটা। বেশ খানিকটা পান চিবিয়ে ধীরেসুস্থে শুরু করলেন: তো ভূত-সরদারের ছেলে বলল, আমি আসলে ভূত না। রূপকুমারী বলল, তুমি তাহলে কে?
আমি নীলফামারীর রাজা নীলরতনের ছেলে নীলকুমার। নীলকুমার! হ্যাঁ আমি নীলকুমার। শিশুবেলায় পুকুরঘাট থেকে আমাকে চুরি করে এনেছিল ভূতের সরদার। তার তো কোনো সন্তান নেই, তাই আমাকে চুরি করে এনে তার ছেলে বানিয়েছে।
‘তাহলে ওই ছেলে দেখতে ভূতের মতো কালো আর লোমশ হলো কী করে?’—রোকনের প্রশ্ন।
দাদি হেসে বলল, ‘এই প্রশ্নটা তো রূপকুমারীও করেছিল নীলকুমারকে।’
‘নীলকুমার কী বলল?’
‘নীলকুমার বলল, ছোটবেলায় ভূত-মায়ের দুধ খেয়ে খেয়ে আমি ওদের মতো হয়ে গিয়েছি।’
‘এখন তাহলে কী হবে?’ নিকিতা শুধায়।
নীলকুমার রূপকুমারীকে বলল, নীলফামারীতে নীলসাগর নামে একটি দিঘি আছে। সেই দিঘিতে যদি আমি একবার ডুব দিতে পারি, তাহলে আবার আমি রাজকুমারের চেহারা ফিরে পাব। তুমি কি আমাকে তোমার পিঠে চাপিয়ে নীলসাগর দিঘিতে নিয়ে যেতে পারবে, রূপা? রূপকুমারী বলল, পারব, তবে পূর্ণিমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। পূর্ণিমা রাতে জ্যোত্স্নায় যখন আকাশ ঝলমল করে উঠবে, তখন আমি তোমাকে নিয়ে যেতে পারি। নীলকুমার বলল, ঠিক আছে, কিন্তু এ কথা যেন এখানে কেউ না জানে।ভূত-সরদারের ছেলের বিয়ে নিয়ে কয়েক দিন ধরে চলল উত্সব। নীলকুমার আর রূপকুমারী মনের কথা গোপন করে সেই উত্সবে হাসিখুশি ভাব নিয়ে যোগ দিল। এভাবে কয়েকটা দিন কাটার পর এল পূর্ণিমা। রাতের আকাশ ফরসা হয়ে এল। এ রকম আলোতে ভূতদের বড় অসুবিধা। ওরা জঙ্গলের ভেতর গাছপালার ছায়ায় শুধু ঘুমায় আর ঘুমায়। যেদিন সবচেয়ে বেশি আলো, কাকেরা ভোর হয়েছে ভেবে ভেবে কা কা করে উঠেছে, ঠিক সেদিন নীলকুমারকে পিঠে চাপিয়ে উড়াল দিল রূপকুমারী। পথ চিনে চিনে উড়তে উড়তে ১৩ ঘণ্টা পর নীলফামারী গিয়ে পৌঁছাল দুজন। নীলকুমার বলল, ওই তো নীলসাগর দেখা যাচ্ছে। আমি এখনই গিয়ে ডুব দিয়ে আসি। রূপকুমারী বলল, না এখন তো দিনের বেলা। এখন আমি পৃথিবীর মাটিতে নামতে পারব না। রাত হোক, জ্যোত্স্না নামুক, তখন তোমায় নিয়ে নামব নীলসাগরের পাড়ে। নীলকুমার মেনে নিল রূপকুমারীর কথা। সারা দিন তারা ভেসে রইল নীল আকাশে সাদা মেঘের পাশে। ধীরে ধীরে রাত হলো। চন্দ্রালোকে ভেসে গেল পৃথিবী। নীলকুমার আর রূপকুমারী নেমে এল নীলসাগর দিঘির পাড়ে। কালো কদাকার লোমশ শরীরের নীলকুমার দিঘির ঘাট পেরিয়ে নামল জলে। একটা ডুব দিয়ে যখন বুক পর্যন্ত উঠে দাঁড়াল, তখন তাকে দেখে আনন্দে রূপকুমারী যেন মূর্ছা যায়। মানুষ এত সুন্দর হতে পারে! রূপকুমারী চিত্কার করে বলল, তুমি তাড়াতাড়ি উঠে এসো নীল, তোমাকে আমি একবার ছুঁয়ে দেখি। কিন্তু নীলকুমার বলল, আমি তো উঠতে পারব না। আমার গায়ে কোনো বস্ত্র নেই।
‘নীলকুমার ন্যাংটো?’—বলে ফিক করে হেসে ফেলল নিকিতা।
রোকন বলল, ‘চুপ কর, নিকিতা, ফাজিল কোথাকার।’
দাদি দুই ভাইবোনকে হাতের ইশারায় চুপ করতে বলে আবার শুরু করল: নীলকুমারের গায়ে বস্ত্র নেই। তো কী করা যায়। অনেক ভেবে ভেবে বুদ্ধি এল রূপকুমারীর মাথায়। গাছের পাতা জুড়ে জুড়ে সুন্দর একটি পোশাক বানাল নীলকুমারের জন্য। সেই পাতার পোশাক পরে নীলকুমার উঠে এল ডাঙায়। তখন নীলকুমারের দিকে তাকিয়ে রূপকুমারী বলল, আজ আমার সবচেয়ে খুশির দিন। নীলকুমার বলল, আমারও। নিকিতা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, ‘ওয়াও, হোয়াট এ হ্যাপি অ্যান্ডিং, ইউ আর গ্রেট দাদি...।’
দাদি বলল, ‘থ্যাংক ইউ।’
রোকন বলল, ‘তারপর কী হলো?’
দাদি বলল, ‘তারপর মানে?’
‘মানে, ওরা কি নীলফামারীতে সুখে বসবাস করতে শুরু করল?’
দাদি বলল, ‘আরে পাগল, পরি আর মানুষ কি একসঙ্গে পৃথিবীতে বাস করতে পারে?’
‘তাহলে কোথায় গেল ওরা? মিশু প্রশ্ন করল এবার।
‘ভোরের আলো ফোটার আগে রূপকুমারী বলল, এবার আমায় বিদায় দাও, নীল, তোমার কথা আমি চিরকাল মনে রাখব। নীল বলল, দুঃখে আমার বুক ভেঙে যাচ্ছে, কিন্তু তোমাকে তো আমি আর পৃথিবীতে ধরে রাখতে পারব না, আমিও যেতে পারব না আকাশের দেশে। আমি তোমাকে মনে রাখব যত দিন বেঁচে থাকি। কথা শেষ হতেই রূপকুমারী উড়ে চলে গেল আকাশে। তার চোখের পানিতে সেদিন বৃষ্টি নেমেছিল পৃথিবীতে।’
নিকিতার চোখ ছলছল করছিল, এবার টপটপ করে গড়িয়ে পড়ল পানি।
দাদি বলল, ‘কেঁদো না দাদু, রাত অনেক হয়েছে, এবার ঘুমোতে যাও, আজ রাতে স্বপ্নে তুমি আরও একবার দেখা পাবে রূপকুমারীর।’
‘আমরা তার দেখা পাব না স্বপ্নে?’—রোকন শুধাল।
‘না, তোমরা পাবে না।’
‘কেন, আমরা স্বপ্নে রূপকুমারীর দেখা পাব না কেন?’—প্রায় সমস্বরে জানতে চাইল রোকন, মিশু আর শিহাব।
‘কারণ, এই গল্পটা তোমরা বিশ্বাস করোনি।’—বলে অদ্ভুত হাসিতে মুখ ভরিয়ে, রুপালি বাটা খুলে একটা পান মুখে দিলেন দাদি।