এক গরিব রাখাল ছেলে। মাকে নিয়ে তার ছোট সংসার। সে খুবই সরল ও সৎ। সে মাঠে মাঠে গরু চরায়। তার নিজের কোনো গরু নেই। অন্যের গরু নিয়ে সারাদিন মাঠে থাকে।
বিকেল হলে ঘরে ফিরে। মা যা দেয় তাই খেয়ে নেয়। কোনো কথা বলে না। বায়না ধরে না। খেয়ে দেয়ে চুপচাপ বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে থাকে।
একদিন রাখালের মা বলল, ‘বাবা, আর কত দিন অন্যের গরু চরাবি? এবার নিজে একটা গরু কিন।’
মায়ের কথা শুনে রাখাল ছেলে খুব খুশি হয়। খুুশি হয়ে রাখাল তার মাকে বলল, ‘বেশ, তুমি যখন গরু কিনতে বলেছ- আমাকে গরু কিনতেই হবে।’ ছেলের কথায় মা-ও খুশি হল।
পরের দিন মাঠের পাশে এক আম গাছের নিচে গিয়ে বসল রাখাল। বসে কী করে একটা গরু কেনা যায় তা ভাবল। তখনি আম গাছ থেকে একটা আম পড়ল। রাখাল আমটা কুড়াল। ওর ভিষণ ক্ষুধা পেয়েছিল। তাই আমটা খেতে চাইল।
রাখাল মুখের কাছে তুলে ধরল আমটা। আমটায় কামড় বসাল। আমটা ছিল খুব টক। তাই এক কামড় খেয়েই রাখাল আমটা ফেলে দিল।
এই দেখে আম গাছটা কষ্ট পেল। বলল, ‘রাখাল আমার আমটা ফেলিস না। খেয়ে নে।’
আম গাছের কথায় রাখাল ফের আমটা হাতে নিল।
রাখাল বলল, ‘তোমার আম খুব টক। খাওয়া যায় না।’
আম গাছ বলল, ‘তা আমি জানি। তুই আমার আমটা খা। তোকে অনেক হীরে দেব, মুক্তা দেব।’
আম গাছের কথা রাখালের বিশ্বাস হল। সে টক আমটা খেল। খেয়ে বলল, ‘এবার আমাকে হীরে দাও, মুক্তা দাও।’
আম গাছ বলল, ‘আমার ডানপাশটায় মাটি খুঁড়ে দেখ। সাতটা সোনার কলস দেখতে পাবি। কলসগুলো হীরে-মুক্তোয় ভরা।’
রাখাল ছেলে আম গাছের ডানে খুঁড়ল। খুঁড়ে সত্যি সত্যি বড় বড় সাতটি কলস পেল। সবগুলো তুলে আনল। রাখাল দেখল সত্যি সত্যি কলসগুলো হীরে-মুক্তোয় ভরা। কলসগুলো পেয়ে রাখাল খুব খুশি হল।
আম গাছ বলল, ‘এবার শোন আমার আম কেন টক। মিষ্টি হলে সবাই এসে আমার আম খেত। হাতের লাঠি দিয়ে মাটিতে খোঁচা দিত। এক সময় হয়ত হীরার খোঁজ পেয়ে যেত। আমি চাইনি এসব অসৎ লোকদের হাতে যাক।
এসব হীরে-মুক্তো ওরা হিসেব করে খরচ করত না। তুই সহজ-সরল মানুষ। তুই অন্যের গরু চরিয়ে দিন কাটাস। তোর দুঃখ আমাকে কষ্ট দেয়। তাই তোকেই হীরে-মুক্তো দিয়ে দিলাম।’
তুই এসব বাড়িতে নিয়ে যা। ধীরে ধীরে বেচে টাকা জমাবি। তোর মতো অসহায় গরিবদের সাহায্য করবি। অন্যের টাকার লোভ করবি না। কাউকে ঠকাবি না।
তুই সৎ মানুষ। এগুলো সৎ মানুষের পুরস্কার। রাখাল ছেলে সাত কলস হীরে-মুক্তো নিয়ে বাড়ি গেল। আম গাছের কথা মতো কাজ করল।
মাকে নিয়ে সুখে তার দিন কাটতে লাগল