যেদিন আমার শশুড় বাজার থেকে ইয়া বড় একটা পাঙ্গাস মাছ এনে আমার সামনে রাখলেন,পাঙ্গাস মাছ টাকে দেখে চিৎকার দিয়ে বলেছিলাম, ও মা গো!আজ পাঙ্গাস মাছ রান্না হবে?
আমার শাশুড়ি মা তার বুকে তিন বার থুঃ থুঃ দিয়ে বলেছিলেন,(ভয় পেয়েছেন)
কেন তুমি পাঙ্গাস মাছ খাওনা?
-হ্যাঁ মা পাঙ্গাস মাছ আমার খুব প্রিয়।
-তাহলে তুমিই তোমার মন মত কাটো মাছ টাকে।
-না মা,আমিতো পাঙ্গাস মাছ খেতে পারি,কাটতে পারিনা।
-আচ্ছা ঠিকাছে আমিই কাটছি।
শাশুমা পাঙ্গাস মাছ কাটছেন আর আমি মন প্রাণ ভরে পাঙ্গাস মাছ কাটা দেখছি।
মনে মনে ভাবছি,ইশ কত দিন হয় পাঙ্গাস মাছ খাইনা।
বাবার বাড়ীতে কেউ পাঙ্গাস মাছ পছন্দ করেনা।
তাই আম্মু আমাকে একার জন্য পাঙ্গাস মাছ রান্না করে দিতো।
পরবর্তীতে আম্মু পাঙ্গাস মাছ রান্না করতে করতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলো।
আর বলেছিলো,আজ থেকে তোর পাঙ্গাস মাছ খাওয়া বন্ধ।
এর পর বিয়ে করে তোর শশুড় বাড়ী গিয়েই তুই পাঙ্গাস মাছ খাবি।
এ বাড়ীতে আজ থেকে পাঙ্গাস মাছ আনা নিষেধ।
আম্মুর কথা মত বাসায় পাঙ্গাস মাছ আনা বন্ধ হয়ে গেলো।
তাই বাধ্য হয়ে রাজিই হতে হলো আমার বিয়ের জন্য।
যাতে শশুড় বাড়ী গিয়ে অন্তত পাঙ্গাস মাছ খেতে পারি।
পরবর্তীতে অবশ্য জেনে ছিলাম কেন আম্মু বাসায় পাঙ্গাস মাছ আনতে আব্বুকে না করে দিয়েছিলো।
কারণ আমি যাতে পাঙ্গাস খাওয়ার লোভে হলেও বিয়েতে রাজি হই।
কারণ আমি সব ছাড়তে পারি,কিন্তু পাঙ্গাস ছাড়তে পারিনা।
পাঙ্গাস মাছ আমার এতই প্রিয় যে,স্কুলের সব থেকে প্রিয় স্যার টার নিক নাম আমি পাঙ্গাস দিয়েছিলাম।
একদিন স্যার ক্লাসে আসছিলো,আর আমি জানালা দিয়ে দেখেই আমার বান্ধবীকে বলেছিলাম,
ওই কথা বন্ধ কর,
পাঙ্গাস স্যার চলে এসেছেন।
কিন্তু স্যার সেদিন ক্লাসে এসেই আমাকে কান ধরে ব্যাঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন।
আমার অপরাধ তাকে আমি পাঙ্গাস বলি।
অথচ স্যার কোন দিন জানতেও পারলোনা,সে যে আমার কত ফেভারেট।তাইতো তাকে আমি ভালবেসে পাঙ্গাস বলি,তাচ্ছিল্য করে নয়।
একদিন এক বান্ধবীর কাছে আমার প্রিয় বান্ধবী রাত্রির সুনাম করছিলাম।
আর শেষে বলেছিলাম,রাত্রির মত মেয়েই হয়না, রাত্রিতো একটা পাঙ্গাস।
সেদিনের পর থেকে রাত্রি আমার সাথে কেন যেন কথাই বলেনা।
পরে শুনেছিলাম,রাত্রি নাকি সাইডে থেকে শুনেছিলো আমি ওকে পাঙ্গাস বলেছি।
আর পাঙ্গাস বলে ওকে নাকি আমি ইন্সাল্ট করেছি।
বিয়ের পর পর ই বর বল্লো,আমার বন্ধুদের সবার বউ ওদের আদর করে কত নামে ডাকে,তুমি আমায় কিছুই বলে ডাকোনা,তাহলে তুমি কি আমায় ভালবাসোনা?
বরকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম,তোমাকে ভাল না বেসে থাকতে পারি?১০ টা না ৫ টা না একটা মাত্র পাঙ্গাস তুমি আমার।
বর আমাকে এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিয়ে বলেছিলো হইছে,তোমার আর আমাকে আদর করে কিছু বলে ডাকতে হবেনা।
সেদিন বরকেও বোঝাতে পারিনি,তাকে যে আমি পাঙ্গাসের মত ভালবাসি।
শাশুড়ির মাছ কাটা শেষে যেই না শাশুড়ি মাছ ধুয়ে রান্না করতে বল্লো,
আর তখনি পাশের বাসার ভাবী এসে বল্লো,মাছ ফ্রিজে রেখে দেন ভাবী।
আজ আপনাদের আমাদের বাসায় দাওয়াত।
আমার ছেলের আজ জন্মদিন।দুপুরে আর রাতে আমাদের বাসায়ই খাবেন আপনারা।
শাশুড়ি হাসি মুখে ঠিকাছে বলে পাঙ্গাস মাছ টা নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিলো।
মাছ টাকে ফ্রিজে তো রাখা হলোনা,
যেন আমার কলিজাটা নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিলো।
ভাবীর বাসার দাওয়াত খেয়ে এসে রাতে যখনি ঘুমিয়ে পড়লাম।
স্বপ্নে দেখি,
খুব মজা করে আমি পাঙ্গাস মাছ টাকে রান্না করেছি।দেখলেই পেট ভরে যাচ্ছে।আর খেতে না জানি কত মজা হয়েছে।
কিন্তু হঠাৎ আমার ননদ ওর জামাই নিয়ে এসে হাজির।তাই ওদের পাঙ্গাস মাছ ই খেতে দিলো শাশুড়ি।এত মজাই হয়েছে যে ননদ আর ননদের জামাই সব টুকু তরকারি চেটেপুটে খেয়ে নিলো।
আর আমি নায়ায়ায়ায়া বলে চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠে গেলাম।
আমার বর বল্লো,কি হয়েছে?খারাপ কোন স্বপ্ন দেখেছো?
-খারাপ নাকি শুধু,মারাত্মক বাজে স্বপ্ন দেখেছি।
পরের দিন সকালে আমি তাড়াতাড়ি করে পাঙ্গাস মাছ টা রান্না করি,
দুপুরে সবাই খেতে বসে ভালো ভালো টুকরো গুলো নিয়ে নিলো,
শেষমেস আমার কপালে জুটলো পাঙ্গাসের লেজ।
তবুও তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খেয়ে নিলাম আমার প্রিয় পাঙ্গাস।
কিছু দিন পর আমি প্রেগন্যান্ট হই,আর সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করে,
কি খেতে ইচ্ছে করে তোমার?কি খাবে তুমি বলো?
আমি শুধু একটা উত্তরই দেই:-পাঙ্গাস।
আমার যখন ৯ মাস শেষের পথে,
সেদিন আমার শশুড় মসাই আমার জন্য একটা ইয়া বড় পাঙ্গাস মাছ নিয়ে আসলেন।
আর শাশুড়ি মাকে বললেন এই মাছ পুরোটা আজকে আমার বউমাকে রান্না করে দিবে।
ও মন প্রাণ ভরে খাক।
শাশুড়ি মা আমাকে আস্ত একটা পাঙ্গাস একাই রান্না করে দিলো।
আমি পুরো মাছ একাই সারাদিন খাচ্ছিলাম।
রাতে যখন খাচ্ছিলাম,তখন একটা টুকরো খাওয়া শুধু বাকি,নিতে যাবো প্লেটে আর তখনি আমার পেইন শুরু হয়।
মাকে বল্লাম,মা পাঙ্গাসের টুকরাটা রেখে দেন।আমি হসপিটাল থেকে এসে খাবো।
আমার বর আমাকে হসপিটালে নিয়ে যায়,ডাক্তার বলেন,এটা ডেলিভারি পেইন।
এখনই আমার বেবী হবে।
আমার বর বাসায় সবাইকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয়।
আমার ফুটফুটে একটা ছেলে সন্তান হয়।
খবর শুনেই আমার শশুড় শাশুড়ি,আমার বাসার সবাই দ্রুত হসপিটালে চলে আসে।
সবাই অনেক খুশি হয়।
আর আমি মনে মনে আমার ছেলেটাকে কাছে নিয়ে বললাম, কাল সকাল পর্যত মায়ের পেটে একটু থাকতে পারলিনা?তাহলেই আমি ওই টুকরাটাও শেষ করে ফেলতে পারতাম।
তোর জন্য হলোনা আমার ওই টুকরাটা খাওয়া।
কেন যেন মনে হচ্ছিলো, আমার ছেলেটা আমাকে বলছে, তোমার এই পাঙ্গাস খেতে খেতে আমি অসহ্য হয়ে গেছি মা।তুমি কি জানোনা?তুমি যা খাও আমিও যে তোমার মাধ্যমে তা ই খাই।
তাই আজ বাধ্য হয়ে আমার দুনিয়ায় আগমন করতেই হলো,নয়তো আমি ধীরেসুস্থে আর কয়টা দিন পরই আসতাম।পাঙ্গাস খেতে খেতে আজ আমি বিরক্ত
শাশুমাকে বললাম,
-মা,
-কি বউমা?খারাপ লাগছে?
-না মা,
-তাহলে কি,বলো?
-মা,পাঙ্গাস মাছের টুকরাটা না কাল হসপিটালে নিয়ে আইসেন।
-ওটা তো আমি খেয়ে ফেলেছি বউমা।
-হলোনারে হলোনা।
-কি হলোনা বউমা?
-হলোনা আমার আর আস্ত একটা পাঙ্গাস খাওয়া
.
.
**সমাপ্ত**
সংগ্রহীত