ভূতুরে জাহাজ; মাঝে মাঝে অশরীরীর জাহাজ নামেও পরিচিত, হলো এমন কোন জাহাজ যার ডেকে কোন জীবিত ক্রু থাকে না; এই কথাটি সম্ভবত লোকাচারবিদ্যা বা কথাসাহিত্যে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে যেমন, দ্য ফ্লাইং ডাচম্যান, বা বাস্তবিক পাওয়া মনুষ্যবিহীন জাহাজ যার ক্রু বা নাবিকদের খুঁজে পাওয়া যায়নি যেমন, মেরি চেলেস্টা। শব্দটি মাঝে মাঝে এমন সব জাহাজের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে যেগুলি সম্প্রতি তার কার্যক্ষমতা থেকে বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে কিন্তু এখনো ভেঙ্গে ফেলা হয়নি যেমন, ক্লেমেনচিউ (আর ৯৮)। কালপঞ্জি: লোকাচারবিদ্যা, পৌরাণিক কাহিনী ও পুরাণ সম্পাদনা অজনা তারিখ: স্থানীয় লোকাচারবিদ্যা ও চিলোটা পুরাণ অনুসারে ক্যালেউসি হলো কাল্পনিক একটি ভৌতিক জাহাজ যা চিলির চিলোই দ্বীপ থেকে রাতে সমুদ্রে যাত্রা করেছিল। ১৭৪৮ সময়কাল থেকে পরবর্তী: বলা হয়ে থাকে লেডি লোভিবন্ড ১৩ই ফেব্রুয়ারি ইচ্ছাকৃতভাবে গোডউইন বালুতে আটকে যায় এবং প্রতি পঞ্চাশ বছর পর পর কেন্ট উপকূলে জাহাজটিকে দেখা যায়। ১৮ শতক থেকে পরবর্তী: নর্থাম্বারল্যান্ডের ভৌতিক জলন্ত জাহাজ জাহাজ যা প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপ ও নিউব্রান্সউইকের মাঝামাঝি নিয়মিতভাবে দেখা যায়। ১৭৯৫ থেকে পরবর্তী: দ্য ফ্লাইং ডাচম্যান, একটি কিংবদন্তী ভূতুরে জাহাজ যা কোনদিন কোথাও নোঙ্গর করেনি এবং সমুদ্রযাত্রায় চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে। ভুতূড়ে জাহাজ নিয়ে যত লোককাহিনী প্রচলিত আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ফ্লাইং ডাচম্যান। ১৯ শতক থেকে পরবর্তী: ১৭৩৮ এর পর প্রিন্সেস অগাস্টার ধ্বংসের পর স্থানীয় লোককাহিনীতে পালাটিন নামে একটি জাহাজ যাকে পালাতিন লাইট হিসেবে উল্লেখ করা হয়; বলা হয়ে থাকে এটি যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ডের ব্লক দ্বীপে দেখা গিয়েছে। ১৮১৩ থেকে পরবর্তী: ১৮১২ সালের যুদ্ধে আমেরিকান ইয়ং টিয়েজার ডুবার পর লোকমুখে শুনা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেইন অঙ্গরাজ্যে টিয়েজার লাইট নামে একটি জলন্ত জাহাজ দেখা গিয়েছিল। ১৮৫৮ থেকে পরবর্তী: ১৮৫৮ সালে এলিজা যুদ্ধের পুড়ে যাওয়া একটি স্টিমার আলাবামার টম্ববিগবি নদীতে ঠান্ডা এবং ঝড়ো শীতকালীন রাত্রিতে দেখা যায় বলে কাহিনী প্রচোলিত রয়েছে। ১৮৭৮ থেকে পরবর্তী: এইচএমএস ইউরেডাইচ যেখানে যুবে গিয়েছিল সেখানে হঠাৎ করেই একটি জাহাজের আকস্মিক আবির্ভাব ঘটে বলে লোকমুখে শুনা যায়। ঘটনাটি যারা প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের মধ্যে ১৯৩০-এর দশকে রয়াল নেভির সাবমেরিন ও ১৯৯৮ সালের ওয়েসেক্স-এর আর্ল প্রিন্স এডওয়ার্ড উল্লেখযোগ্য। ১৮৭২ বা ১৮৮২: আয়রন মাউন্টেইন নামে একটি নৌকা, কিংবদন্তী অনুসারে, রহস্যময়ভাবে মিসিসিপি নদী থেকে হারিয়ে যায়। বাস্তবে নৌকাটি ১৮৮২ সালে মিসিসিপির ভিকসবার্গে ডুবে গিয়েছিল এবং এটি মোটেও রহস্য ছিল না। ১৯২৮:কুবেনহাবন নামে একটি জাহাজ সর্বশেষ যোগাযোগ করেছিল ২৮শে ডিসেম্বর ১৯২৮ সালে। এর প্রায় দুই বছর পর এই জাহাজের বর্ণনার সাথে হুবহু মিলে যায় এমন একটি জাহাজ প্রশান্ত মহাসাগরে দেখা গিয়েছিল বলে শুনা যায়। অপ্রমাণিত: ১৭৭৫: The অক্টাভিয়াস, একটি ইংরেজ বাণিজ্য জাহাজ যা চীন থেকে ফিরতেছিল কিন্তু কিছুদিন জাহাজটি কয়কদিন পর গ্রীনল্যান্ডের উপকূলে পাওয়া যায়। ক্যাপ্টেনের লগ থেকে জানা যায় এটি উত্তর-পশ্চিম পথ ধরে যাত্রার পরিকল্পনা করেছিল যা ছিল অত্যন্ত বিপদসংকুল। জাহাজ ও তার হিমায়িত ক্রুদের ১৩ বছর পর একই পথ ধরে যাত্রা সম্পন্ন করার কথা লোকমুখে প্রচলিত। ১৮৪০: স্কোনার জেনি নামে একটি জাহাজ হারিয়ে যাওয়ার ১৭ বছর পর বরফের বৃত্তের মধ্যে ড্রাক প্যাসেজের মধ্যে পাওয়া যায়। এটি আবিষ্কার করে ওয়ালির হুপ জাহাজের ক্যাপ্টেন ব্রিগটন এবং জাহাজটি ১৮২৩ সাল থেকে বরফে নিমজ্জিত ছিল; জাহাজটির সর্বশেষ কল ছিল পেরুর লিমাতে। জাহাজের মধ্যে বরফে আচ্ছাদিত থাকা ৭টি মৃতদেহ হুপ জাহাজের ক্রুরা সাগরে সমাহিত করেন মৃত্যুর প্রায় ১৭ বছর পর। ১৮৮০: সীবার্ড নামে একটি জাহাজ যার কমান্ডে ছিলেন জন হুশাম রোড দ্বীপের ইস্টন আইল্যান্ডে পাওয়া যায়। জাহাজটি হন্ডুরাস থেকে যাত্রা করে ফিরছিল এবং ঐদিন নিউপোর্টে থাকার কথা ছিল। জাহাজটি যখন পাওয়া যায় তখন এর মধ্যে একমাত্র জীবিত প্রাণী ছিল একটি কুকুর। ১৯৪৭: ওরাঙ মেডান নামে একটি জাহাজ ইন্দোনেশিয়া উপকূলে পাওয়া যায় এবং এর সকল ক্রু ছিল মৃত। উদ্ধারকর্মীরা যখন জাহাজটি খুঁজে পায় তখন এটি প্রায় ডুবো ডুবো অবস্থায় ছিল এবং এর সকল ক্রুই ছিল হিমায়িত। ঐতিহাসিকভাবে সত্যায়িত সম্পাদনা ১৮৫৫: এইচএমএস রিসোলাতে (১৮৫০) ব্যাফিন দ্বীপের উপকূলে বন্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এটি হলো জন ফ্রাঙ্কলিনের জন্য গঠিত এডওয়ার্ড ব্যালচার্চের অনুসন্ধান অভিযানের সময় অনুসন্ধান করা চারটি জাহাজের মধ্যে একটি যে অভিযানটি গত বছরই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। জাহাজটি অবিষ্কারের পূর্বে এটি ১,২০০ মাইল (১,৯০০ কিমি) পথ অতিক্রম করেছিল ও এটি বরফের স্তর কাটিয়ে দ্বীপে এসেছিল। আমাজান (পরবর্তীতে মেরি চেলেস্টা নামকরণ করা হয়) ক্যারোল অ্য. ডিরিং যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ডের লাইট ভেসেল থেকে উত্তর ক্যারোলিনার কেপ লোকআউটে ১৯২১ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি দেখা যায়। রেউ-আন মারো আলাস্কার উপকূলে ১৮৭২: মেরি চেলেস্টা, ব্রিটিশ-আমেরিকার বিশ্ব বিখ্যাত জাহাজ। ১৮৭২ সালের ৪ ডিসেম্বর মেরি চেলেস্টকে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে মনূষ্যহীন ও যাত্রার জন্য তৈরী অবস্থায় পাওয়া যায়। জাহজের ৭ জন নাবিকের একজনকেও খোঁজে পাওয়া যায় নি। ১৮৮৪: রিসলভেন বাকালিউ ও কাটালিনা, নিউফাউন্ডল্যান্ড ও লাবরাডোর এর মাঝামাঝি জায়গায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় এটির লাইফবোট পাওয়া যায়নি। এছাড়াও জাহাজের ক্রুদের বা তাদের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। দাবী করা হয় জাহাজটি যখন বরফে ধাক্কা লাগে তখন সকলেই মাতাল অবস্থায় ছিল। ১৯১৭: জেবরিনা, নামে একটি পালতোলা ছোট জাহাজ কয়লা নিয়ে ইংল্যান্ড থেকে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে কিন্তু দুই দিন পর জাহাজটি দক্ষিণ সাবরবাগ, রোজেল পয়েন্টে পাওয়া যায়। জাহাজের কোন ক্ষতি হয়নি কিন্তু এর ক্রুদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৯২১: দ্য ক্যারল অ্য ডেরিং, একটি পঞ্চ মাস্টেড কার্গো স্কোনার যা উত্তর ক্যারোলিনার ডায়মন্ড সোয়ালে অসহায় অবস্থায় পাওয়া যায়। ঘটনাটি নিয়ে অনেক বিতর্ক উপস্থিত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি ডিপার্টমেন্টের গোয়েন্দারা তদন্ত করেও তেমন কিছু পাননি। যদিও লোকমুখে অস্বাভাবিক ঘটনার কথা ছড়িয়ে পরে কিন্তু বিদ্রোহ বা জলদস্যুতার সম্ভাবনাকেই গুরত্ব দেওয়া হয়েছিল। ১৯৩১: ব্যাচিমো জাহাজটি উত্তর মহাসাগর-এ বরফে আটকা পড়ে ও ডুবে যায় কিন্তু লোককাহিনী অনুসারে এটি পরবর্তী ৩৮ বছর বেশ কয়েকবার সাগরে দেখা গিয়েছিল। ১৯৩৩: ১৯০৬ সালের ডুবে যাওয়া মানুষবাহী একটি জাহাজ এসএস ভ্যালেনসিয়ার একটি লাইফবোট ২৭ বছর পর ভ্যানকোভের দ্বীপের উপকূলে ভালো অবস্থায় ভাসতে দেখা যায়। নাবিকরা এটিও বলে থাকেন যে তারা জাহাজটি ডুবার পরের বছরও এটি এই এলাকায় দেখেছিলেন। ১৯৫৫: এমভি জয়িতা প্রশান্ত মহাসাগরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তদন্তে কর্মীদের কোন খবর প্রকাশিত হয়নি। ১৯৫৯: একটি ভৌতিক সাবমেরিন ক্রুবিহীন উত্তর স্পেনের বিস্কে উপসাগর-এ ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। পরবর্তীতে আবিস্কৃত হয় খালি সাবটি অন্য একটি ভেসেলের সাথে বাধা ছিল এবং এটির চেইন ছিন্ন হয়েছিল। ১৯৬৯: তিগমাউথ ইলেক্ট্রন আটলান্টিক মহাসাগরে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তদন্তে প্রমাণিত হয় এর একমাত্র ক্রু ডুনাল্ড ক্রুহাস্ট মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন এবং তিনি জাহাজের ডেক থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন। ২০০৩: হাই এইম ৬ রউলি সুয়ালের ৮০ নটিক্যাল মাইল (১৫০ কিমি; ৯২ মা) পূর্বে অস্ট্রেলিয়ান জলসীমায় ভাসতে দেখা যায়। সেসময় এর একজন ক্রুও পাওয়া যায়নি। ২০০৬: ট্যাঙ্কার জিয়ান সেং মার্চে অস্ট্রেলিয়ার কুইনল্যান্ডের উইপা উপকূলে পাওয়া যায়। এর মূল মালিক বা জাহাজটি কোন দেশের তা কখনো জানা যায়নি এবং এর ইঞ্জিন কিছুটা নষ্ট ছিল। ২০০৬: আগস্টে বেল অ্যামিকা সারদিনিয়া উপকূলে আবিস্কৃত হয়। কোস্ট গার্ড সদস্যরা দেখতে পান জাহাজে অর্ধেক শেষ করা মিশরীয় খাদ্য, উত্তর আফ্রিকান সাগরের ফরাসি একটি ম্যাপ ও লুক্সেমবুর্গ-এর একটি পতাকা। ২০০৭: কাজ ২ নামে একটি ৯.৮-মিটার কাঠের ভেলা বা ইয়ট যা ১৮ই এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার উপকূল থেকে ১৬৩ কিমি. (৮৮ ন্যাটিকাল মাইল) দূরে পাওয়া গিয়েছিল। ইয়টটিতে তিনজন যাত্রী ছিল কিন্তু ইয়টটি উদ্ধারের সময় তাদের কাউকেই খোঁজে পাওয়া যায় নি। ২০০৮: ৯ই নভেম্বর পঞ্চাশ টন তাইওয়ানীজ ভেসেল তাই চিং ২১ (চীনা: 大慶21號) কিরিবাস-এ ভাসতে দেখা যায়। জাহাজটিতে কয়েকদিন পূর্বে আগুন ধরেছিল; এর লাইফবোট ও ক্রুয়ার নিরুদ্দেশ ছিল। জাহাজটি থেকে কোন মেডে কল করা হয়নি এবং সর্বশেষ যোগাযোগ হয়েছিল ২৮শে অক্টোবর। ফিজির উত্তরে প্রশান্ত মাহাসাগরে ২১,০০০ বর্গমাইল (৫৪,০০০ বর্গ কিমি.) এলাকাজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর সি-১৩০ হারকিউলিস ও নিউজিল্যান্ডের পি-৩ ওরিন তাইওয়ানী ক্যাপ্টেন (顏金港) বা এর ক্রুদের (১৮ জন চীনা, ৬ জন ইন্দোনেশীয় ও ৪ জন ফিলিপিনো) খুঁজে পায়নি। ২০১২: রেউআন মারু, নামে একটি জাপানি মাছ ধরার ভেসেল মার্চ ২০১১-এর সুনামিতে হারিয়ে যায়। এটি প্রায় এক বছর পর কানার অভিমুখী ভাসতে দেখা যায় ও ডেকে কোন ক্রু ছিল না। ৫ই এপ্রিল ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ডরা জাহাজটি ডুবিয়ে দেন। ২০১৩: এমভি লেয়াবোভ ওরলোভা, নামে সোভিয়েত একটি ক্রইজ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভাসতে দেখা যায়। আজও অনেক রহস্যময় ভূতুরে জাহাজ আছে যা এখনও রহস্যময় হয়ে আছে।