- আমি চলে যাচ্ছি।(নিলিমা)
- হুম।(আমি)
- ভালো থেকো?(নিলিমা)
- আচ্ছা।(আমি)
সেদিন শেষ বারের মতো এই কথাগুলোই হয়েছিলো আমাদের।
অনেক ভালোবাসা সত্তেও আমি সেদিন ওকে আটকাতে পারি নাই।
কারনটা আমার বয়স।
যখন ওর বিয়ে হয় তখন আমার বয়স ১৮ ও হয়নি।
তখন সবে মাত্র ডিপ্লোমা প্রথম সেমিস্টার এ ভর্তি হলাম।
আর ওর বিয়েটা ঠিক তখনি ঠিক হলো।
না ঠিক হলো বললে ভুল হবে।
অনেক আগে থেকেই ঠিক। রিলেশন এর আগে ও আমাকে
বলেছিলো কথাটা কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনাই।
কিন্তু এখন বুঝতে পারতাছি কথাটা সত্তি ছিলো।
তারপরও জেনে শুনে আমরা সেই রাস্তাটাই বেছে নিয়েছিলাম।
না ওটা টাইমপাস ছিলোনা। সত্তিকারের ভালোবাসা ছিলো ওটা।
আমার বয়স তখন খুব কম। চাইলেও তখন অনেক কিছুই
করতে পারিনি।
তাই বলে সবকিছু আবেগ ছিলোনা কিন্তু আমি সত্তি ওকে ভালোবাসতাম না সরি এখনো ভালোবাসি।
,
চলুন প্রথম থেকে শুরু করি!!!
আমি সানভি আহমেদ সাকিব। বর্তমানে গল্প লিখি। তবে এর পিছনেও একটা কারন আছে। সেটা নিলিমা। একদিন ও আমাকে বলেছিলো যতদিন তুমি আছো ততদিন আমি তোমার গল্প হয়ে থাকবো। হ্যা এই জন্যই আমার গল্পে শুধু নিলিমা।
,
আমার গল্প লিখার পিছনেও একটা কাহিনি আছে?
শুনবেন??
চলুন বলে ফেলি,
ফেসবুকে ঘুরাঘুরি করতে করতে হঠাৎ একটা পোস্ট পেলাম।
ভালোবাসার গল্প।
পড়লাম গল্পটা অনেক ভালো গল্পটা ছিলো।
তারপর থেকে প্রায়ই গল্প পড়তাম মাঝে মাঝে সময় ভাবতাম
এতো বড় গল্প লিখে কিভাবে এরা।
বেশ কৌতুহল হয়েছিলো সেদিন। এরপর আলাদা একটা গ্রুপ এ এড হলাম তখন খুব বেশি রাইটার ছিলো না।
আমি গল্প কপি করতাম। হ্যা আমিও একদিন কপি করতাম।
৪ টা না ৫ টা গল্প কপি করার পর একদিন ধরা খেয়ে গেলাম এক লেখকের হাতে।
অনেক কথা বলেছিলো সেদিন।
যেমন, নিজে পারিস না অন্যের টা কপি কেনো করস?
আবাল পোলাপান পারলে নিজে লিখে দেখা।
এইরকম কিছু কথা।
সেদিন থেকেই শুরু।
মনে পড়ে প্রথম কিছু লিখা গল্প।
যেগুলাতে খুব বাজে কমেন্ট পড়েছিলো।
কেও ছিলোনা আমার ভুলগুলা শুধরে দেওয়ার মতো।
আস্তে আস্তে নিজের প্রচেষ্টায় গল্প লিখলাম।
দিনের পর দিন এই গল্প নিয়েই পড়ে থাকতাম সেই থেকে আজকের সানভি আমি।
ধন্যবাদ সেই লেখক কে যার জন্য আমিও লিখি।
,
আমার গল্প লিখার কাহিনি বলে বিরক্ত করলাম তাইনা।
মাফ চেয়ে নিচ্ছি সেইজন্য।
এখনন চলুন কাহিনিতে ফেরা যাক।
,
নিলিমার সাথে আমার পরিচয়টা ফেসবুকে।
এমনভাবে তার সাথে পরিচয় হইছিলো আমার মনে হয়না আর কারো সাথে এমনভাবে পরিচয় হইছে।
মেসেজ দিছিলাম এক ফ্রেন্ড কে মেয়ে ফ্রেন্ড।
রিপ্লাই দিছিলো ও।
আস্তে আস্তে জানতে পারলাম আইডিটা ওর ফ্রেন্ড ওকে চালানোর জন্য দিছে।
,
তারপর আমার ফ্রেন্ড এর কাছ থেকে ওর সব ইনফরমেশন নিলাম।
জানতে পারলাম সেও নাকি স্টোরি পড়তে ভালোবাসে।
,
হ্যা এভাবেই শুরু হয়েছিলো আমাদের বন্ধুত্ব।
বেশিদিন না মাত্র ২২ দিন পর আমরা বুঝতে পারি আমরা একে অপরকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলছি।
আমি সেদিনই প্রোপোস করছিলাম ওকে।
একটা মেয়েকে নাকি সারাজিবন এও চেনা যায়না কিন্তু বিশ্বাস করেন আমি ওই ২২ দিনেই ওকে চিনে ফেলেছিলাম।
ও অনেকবার বলছিলো আমাকে ওর বিয়ে ঠিক।
আমি বিশ্বাস করি নাই। আমিই জোর করছিলাম ওকে।
একটা সময় ও রাজি হয়ে গেলো আমার জোরের জন্য না নিজের ভালোবাসার টানে।
,
এভাবে প্রায় ৫ মাস কেটে গেলো।
হ্যা রিলেশনটা আমাদের ৫ মাসের তারপর তো সব এলোমেলো হয়ে গেলো।
যার সাথে ওর বিয়ে ঠিক সে দেশে ব্যাক করলো।
বিয়ে করে নিয়ে গেলো নিলিমাকে।
বিদেশ না ওদের বাসায়।
প্রথমের কথাগুলো সেদিনই হয়েছিলো।
,
ওর বিয়ের একমাস আগে থেকেই ও আমার সাথে কম কথা বলতো। কারন ও নাকি মায়া কাটাতে চাইছিলো বাট পারে নাই।
বিশ্বাস করেন আমি প্রতিটা রাতে কাদতাম।
আল্লাহর কাছে কতবার বলছি তার হিসেব নাই।
সে দেয় নাই।
মধ্যরাতে উঠে তাহাজ্জুদ এর নামাজ ও পড়ছি।
মোনাজাত এর সময় চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি পড়তো।
জায়নামাজ ভিজে যেতো বাট আল্লাহর মন ভিজতো না।
জানিনা কি দোষ করেছিলাম যার জন্য আল্লাহ আমার ওপর এতো নারাজ।
সেদিনের পর নামাজ ছেড়ে দিছিলাম।
বারবার ইচ্ছা হতো মরে যাই বাট পারতাম না।
প্রতিবার ওর হাসিটা আমার কানে বাজতো।
আমি ওর চাইতে ওর হাসিটা ভালোবাসতাম।
সেই মুচকি হাসি যেটা ফোনের এ প্রান্ত থেকে শুনে ভাবতাম
এভাবে ওর হাসি শুনে আমি সারাজিবন কাটিয়ে দিবো।
বাট ওর বিয়ের পর আর আমাদের যোগাযোগ হয়নাই।
আমি প্রতিদিন ওর কথা ভাবতাম।
ওর কথা মনে হলেই আমার চোখে পানি চলে আসতো।
এখনো আসে।
অপরিক্কিত বয়সে প্রেম করেছিলাম যার ফলটা আজো দিয়ে যাচ্ছি।
এভাবেই ওর কথা ওর সৃতি ওর ছবি নিয়ে বেচে আছি।
,
আজ চার বছর পর।
একটা বেসরকারি প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করি।
যদিও ডিপ্লোমার পর আরো ভালো চাকরি আমি পেতাম তবে আমি চাইছিলাম একটা নিষ্পাপ জিবন।
এতোগুলা নিষ্পাপ শিশুর সাথে থাকলে আমি আর কষ্ট পাবোনা।
,
আজ প্রথম দিন ক্লাস নিতে যাচ্ছি।
ক্লাসে ডুকতেই একটা চটপটে মিষ্টি ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
- তুমি নতুন টিচার?(ছেলেটা)
সবচেয়ে ছোট এই ছেলেটা। তিন বছর বয়স হবে।
ছেলেটাকে দেখে আমি কোলে তুলে নিলাম।
আমি যানিনা আমার ভিতর থেকে কেনো এমন মনে হলো।
ছেলেটাকে খুব আপন মনে হলো খুব আপন যেনো আমার রক্তের কেও।
আমি বললাম,
- নাম কি তোমার আংকেল?(আমি)
- আমার নাম সানভি?(ছেলেটা)
সানভি নামটা শুনেই মনে পড়ে গেলো আমি ওকে বলেছিলাম আমাদের ছেলের নাম হবে সানভি।
,
আজকে আরেকটা সানভি পেয়ে গেলাম বাহ ভালোই।
- আমার নামও তো সানভি।(আমি)
হঠাৎ পেছন থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো,
- ও কিন্তু খুব দুষ্ট। আপনাকে অনেক জ্বালাইছে তাইনা?(মেয়েটা)
কন্ঠটা শুনে পেছনে তাকালাম।
এটা আমি কি দেখছি..
নিলিমা এখানে। তার মানে এইটা ওর ছেলে।
আমাকে মনে হয় চিনতে পারে নাই।
আমি ঠিকই চিনে ফেলছি।
- আম্মু যানো এই আংকেল এর নামও সানভি?(ছেলেটা)
সানভি নামটা শুনে ওর মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।
আমি চুপচাপ দাড়িয়ে আছি।
- কেমন আছো?(নিলিমা)
- হুম ভালোই তুমিও তো দেখি ভালোই আছো। আর তোমার ছেলেটা কিন্তু ভিষন কিউট?(আমি)
- তোমার নামের নামই তো।(নিলিমা)
- হুমম।(আমি)
- তো বিয়ে করছো?(নিলিমা)
- নাহ সেটা আমাকে দিয়ে হবেনা।(আমি)
- কেনো?(নিলিমা)
- এমনি।
কারনটা বলে ওকে বিব্রত করে দিতে চাইনা আমি।
- গল্প লিখো এখনো?(নিলিমা)
- হ্যা।(আমি)
- গল্পের নতুন নায়িকা খুজে পাওনি?(নিলিমা)
- খুজার ইচ্ছা নাই।(আমি)
,
চোখের কোনো পানি চলে আসছে তাই ওয়াশরুমে চলে আসলাম।
আবারো সেই মুখটা দেখতে পেরে ভালো লাগছে অনেক।
ভাবি নাই কখনো এভাবে দেখা হবে কোনোদিন।
তবে এখানে আর থাকবো না।
আমি জানি এখানে থাকলে আমি নিজেকে সামলাতে পারবো না।
আর হয়তো ও ও পারবে না।
রাতেই রওনা দিয়ে দিলাম অজানা গন্তব্যে।
হয়তো হঠাৎ করে আবারো দেখা হয়ে যাবে কোনোদিন।
ভালো থাকুক নিলিমারা।
আর আমরা ভালো থাকবো তোমাদের ভালো থাকায়।
হয়তো হঠাৎ করে আবারো দেখা হয়ে যাবে কোনোদিন।