আজ বহুদিন পর দিদির বিয়ের ফোল্ডারটা খোলে শুভম। প্রথমেই দিদির হাসি হাসি মুখের বড় করে ক্লোজআপ। মুখের প্রতিটা অংশে খুশির ছোঁঁওয়া, চোখ দুটোয় লজ্জা মেশানো এক সুন্দর অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে। এখনো শুভমের মনের মধ্যে জ্বলজ্বল করছে দিনটা । দিদির বিয়েটা যে অমন হুট করে হয়ে যাবে কেউ ভাবে নি। আর ঐ আনন্দের দিনটাই যে ওদের জীবনটা এভাবে বদলে দেবে তাও বোঝে নি কেউ।
পর পর দিদির আইবুড়ো ভাত, অধিবাস, বিদ্ধির ছবি। এরপর বর এসেছে। মা বরণ করছেন, বর আসনে জিজু, শুভদৃষ্টি মালাবদল বিয়ের সব দৃশ্য পর পর সাজানো।
দিদি বিয়ের পর দ্বিরাগমনে এসে নিজের হাতে ফটো গুলো সাজিয়েছিল এই ল্যাপটপে। কি খুশি খুশি লাগছিল দিদিকে সেই দিন। একটা সুন্দর ভাললাগার আবেশ সারা গায়ে মেখে রেখেছিল দিদি। একটা মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পরছিল যেন। নতুন শাড়ি গহনায়, টুকটুকে লাল সিঁদুরে তার কুড়ি বছরের চেনা দিদিকে অচেনা লাগছিল মাঝে মাঝে। সেদিন বিয়ের সব উপহার দিদির সাথে বসে খুলেছিল শুভম। একদিনের জন্য দ্বিরাগমনে এসে সব আত্মীয়র মাঝে দিদির মুখে শুধু শ্বশুর বাড়ির প্রশংসা আর গল্প। হঠাৎ করে দিদির বিয়েটা হওয়ায় শুভমের মনে যে ভয়টা দানা বেঁধেছিল সেটা সেদিন পালিয়ে গেছিল। জিজুর ছুটি কম তাই একদিন থেকেই ওরা চলে গেছিল। কত গল্প করেছিল সবাই মিলে। খুব আনন্দে কেটেছিল সন্ধ্যাটা। পরদিন ওদের মধুচন্দ্রিমায় মালদীপ যাওয়ার কথা।
ওটাই যে দিদির সাথে কাটানো শেষ সন্ধ্যা হতে চলেছে শুভম জানতো না তখনো। প্রায় সাতদিন কুর্চির ফোন না পেয়ে প্রথমে ওর শ্বশুর শাশুরী কে ফোন করেছিল ওর বাবা তরুণ বাবু। নম্বর না লাগায় অবাক হয়েছিল। শুভম বারবার জিজুর নম্বর, দিদির নম্বর ট্রাই করে গেছে। তার সেলফি স্পেশালিষ্ট দিদি একটা হানিমুনের ছবিও যখন ফেসবুকে বা হোয়াটস আপে দেয় নি তখন সন্দেহটা ভয়ে পরিনত হয়েছিল শুভমের। ভোডাফোনের কাষ্টমার কেয়ারে চাকরী করে নীলুর দাদা, তাকে জিজুর নম্বর দুটো দিয়ে জানতে পারে ওগুলোর অস্তিত্ব নেই। নম্বর ডিটেলস এবং পেপার সব ভুলভাল। তার চেয়েও বেশি অবাক হয় যে দিদির ফোনটার লাষ্ট টাওয়ার লোকেশন দিল্লী। শ্বশুরের আর শাশুরীর কলকাতা এয়ার পোর্ট। আর কিছু ভাবতে পারছিল না শুভম। বাবাকে নিয়ে ছুটেছিল দিদির শ্বশুর বাড়ি সল্টলেক। জানতে পেরেছিল ঐ ফার্নিষ্ট ফ্ল্যাটটা ওরা ভাড়া নিয়েছিল কয়েক মাসের জন্য। সাতদিন আগে ছেড়ে দিয়েছে। থানায় ছুটে গেছিলেন তরুণ বাবু আর শুভম। মামার এক বন্ধু ছিলেন লালবাজারে। তিনি সব শুনে এবং ফোন নম্বর ও ফটো নিয়ে কয়েকদিন সময় চেয়েছিলেন।
বাড়ি ফিরে তরুণবাবু মেয়ের ছোটবেলার একটা ল্যামিনেট করা ফটো নিয়ে সোফায় বসে ছিলেন সারা রাত। মা নিরা দেবী ঠাকুরঘরেই কাটিয়েছিলেন দুদিন। আর শুভম নেটে তন্ন তন্ন করে সার্চ করেছিল জিজুর প্রোফাইল। যেটা রাতারাতি উড়ে গেছিল।
পেপার দেখেই কুর্চির সম্বন্ধটা এসেছিল এড বের হওয়ার দুদিন পরে। ছেলে আমেরিকা ফেরৎ, মুম্বাইতে কর্মরতা, এক সপ্তাহের ছুটিতে এসেছিল। একমাত্র ছেলে, বাবা মা সল্টলেকে থাকেন। বিকেলেই দেখতে আসতে চেয়েছিলেন। আসলে ছেলের ছুটি কম, মেয়ে পছন্দ হলে বিয়ের ফাইনাল্ করে ফেলবেন সাথে সাথে এমন বলেছিলেন ওনারা। আর বাড়িতে নয়, প্রথম দেখার জন্য ওনারা ইকো পার্কে আসতে বলেছিলেন। বাড়ি গিয়ে মেয়ে দেখতে নাকি ছেলের আপত্তি। পছন্দ হলে বাড়ি তো যেতেই হবে ভবিষ্যতে। এই প্রস্তাবটা সবার খুব ভাল লেগেছিল। আসলে এডটা দেখে আরো অনেকেই ফোন করেছিলেন, তবে সবাই ফোনেই মেয়ের বাবা, মা, ভাই এর খোঁজ নিয়ে মেয়ের বায়ডাটা মেল করতে বলতো। আর ফটো চাইতো। কেউ কেউ হোয়াটস আপে রাশি-গন-বয়স বাকি সব কিছুর ডিটেল চাইতো।
বাবা মা একটু আলোচনা করে ওনাদের প্রস্তাব মেনে নিয়েছিলেন। দমদম থেকে মেয়েকে নিয়ে বিকেল পাঁচটায় ইকোপার্ক চলে গেছিলেন তরুণ বাবু ও শুভম। নিরা দেবী সেদিনো ঠাকুর ঘরেই পড়ে ছিলেন।
ঝকঝকে আইটি ইঞ্জিনিয়ার আমন কে সবার খুব পছন্দ হয়েছিল। কুর্চির সাথে পার্কেই একটু আলাদা বসে অনেকক্ষণ গল্প করেছিল আমন। ছেলের বাবা বিমান বাবু তরুণ বাবুর বন্ধু হয়ে গেছিলেন কিছুক্ষণের মধ্যেই। ওনারা প্রবাসী বাঙ্গালী। কয়েকমাস হলো মাটির টানে কলকাতা ফিরেছেন। আপাতত সল্টলেকে ভাড়া আছেন। নিউটাউনে ফ্ল্যাট দেখছেন, ছেলে বিয়ে করে আপাতত মুম্বাই যাবে বৌ নিয়ে। তবে পরে বিদেশ যেতে পারে আবার, এও বলেছিলেন। শুভমের আমনকে ভালই লেগেছিল। দিদির সাথে আমনের সব কিছুই ম্যাচ করছিল ঠিকঠাক - ফেভরিট চাইনিজ, বিরিয়ানী না পসন্দ। দুজনের সমুদ্র বেশি ভাল লাগে। আইসক্রিম দুজনেরই হট ফেভরিট। গান শুনতেও দুজনেই ভালবাসে। হাসিখুশি আমন কিছুক্ষণের মধ্যেই সবার মন জয় করে নিয়েছিল। পরদিন সপরিবারে বাড়িতে এসেছিলেন বিমান বাবু। তরুণ বাবুর হাত দুটো ধরে বলেছিলেন, "বহু বছর আমরা কলকাতার বাইরে ছিলাম। এখানে আত্মীয় পরিজন তেমন নেই। আজ থেকে আপনারাই আমাদের পরম আত্মীয়, মেয়েটিকে আমরা নিচ্ছি। ওতো আমনের সাথে বাইরে চলে যাবে। আমরা চার বুড়োবুড়ি আপনার ছেলে শুভম কে নিয়ে বেশ মিলে মিশে থাকবো এখানে।" আমনের মা বিপাশা দেবীও নিরা দেবীকে বোন পাতিয়ে ফেলেছিলেন কিছুক্ষণের মধ্যেই।
এক মাসের মাথায় বিয়ের ডেট ঠিক করে আমন ফিরে গেছিল। এক মাস ঘন্টায় ঘন্টায় আমনের ফোন আসতো মুম্বাই থেকে। রাত জেগে চ্যাট করতো কুর্চি ও শুভমের সাথে। তরুণ বাবুর আত্মীয় বন্ধুরাও হঠাৎ করে কুর্চির বিয়ে শুনে ভালো করে খোঁজ খবর নিতে বলেছিলো। কিন্তু চরম ব্যস্ততার মাঝে দেখতে দেখতে একমাস কেটে গেছিল। বিপাশা দেবী কুর্চি আর নিরা দেবীকে নিয়েই সব শপিং করেছিলেন। ওনাদের কোনো দাবী ছিল না। নমস্কারীও মানা করে দিয়েছিলেন। এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে ঠিক হওয়ায় দু পক্ষের দূরের আত্মীয়রা তেমন কেউ আসতেই পারে নি। আমনের এক মাসী-মেসো, মামা-মামী এসেছিল শুধু। বড়যাত্রি মাত্র বারো জন। তরুণ বাবুর শালারা সব কলকাতাতেই থাকতেন। উত্তরবঙ্গ থেকে ভাই আর তার ছেলে এসেছিল শুধু। দেখতে দেখতে বিয়ে হয়ে গেলো। সবাই কুর্চির শ্বশুর বাড়ির প্রশংসা করেছিল। বৌভাতে কন্যা যাত্রি পঞ্চাশ জন ছাড়া জনা কুড়ি লোক হয়েছিল। তরুণ বাবু আগেই বলেছিলেন চাকরী জীবন ওনার কোচীতে কেটেছে। কলকাতায় তেমন পরিচিতি নেই। সল্টলেকে পাড়ার লোকেরা তেমন মিশুকে নয়। আর ওনাদের পাড়ায় প্রায় সব বাড়িই ফাঁকা। ছেলের মুম্বাই থেকে তিনজন বন্ধু এসেছিল।
এই একটা ব্যাপারই শুভমের কেমন যেন লেগেছিল। তবে নীলুদার বোনের বিয়েতে কন্যা যাত্রি গিয়েও এমন দেখেছিল ও। নীলুদার বোনের শ্বশুর বাড়ি দিল্লি, ওনারা দিল্লি থেকে মাত্র দশ জন এসেছিলেন বলে লোক ছিলই না প্রায় বৌভাতের দিন। শুধু কন্যাযাত্রি কয়েকজন। এখন কিন্তু নীলুদার বোন ভাল আছে।
শুভমের দিদির কপালটাই খারাপ। এক বছর হতে চলল কুর্চির কোনো খবর নেই। দিদির সাথে ওদের বাড়ির সবার হাসি আর আনন্দ গুলোও বিদায় নিয়েছে। প্রথম প্রথম আত্মীয় বন্ধুরা আসতো, তবে তারা সান্তনা দেওয়ার বদলে খোচা দিয়ে তরুণ বাবুর ভুল গুলো দেখাত বেশি। উনি কেনো খোঁজ নেননি, কেনো সবাইকে সে সময় ডাকেন নি, জানাননি , কেনো একমাসেই বিয়ে দিতে রাজি হয়েছিলেন এসব বলতে কেউ ছাড়তো না। তরুণবাবু পাথর হয়ে গেছিলেন। শুভম দিদির খোঁঁজে যে যা বলেছে করেছে। সোস্যাল মিডিয়ায় ছবি দেওয়া থেকে বিভিন্ন ওপর মহলে দৌড়াদৌড়ি। কয়েকমাস পরে ফেসবুকেই একজন জানিয়েছিল এই ছেলের বাবা-মা কে তারা চিনতেন, তবে অন্য এক ছেলের বাবা হিসাবে। ছমাস আগে তাদের বাড়িও মেয়ে দেখতে গেছিলেন ওনারা। মেয়ে পছন্দও করেছিলেন ছেলের জন্য। এক মাসের মধ্যে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় ওনারা রাজি হন নি। কারন মেয়ের দাদা বাইরে থাকতো। ছমাস আগে সে ছুটি পাবে না। তাই ওনারা বিয়ে ক্যানসেল করে দেন।
আরেকজন জানিয়েছিল প্রায় এমন দেখতে একটি ছেলে তার বোনকেও পছন্দ করেছিল। মুম্বাই অফিসের ঠিকানা চাওয়ায় দেব দিচ্ছি করে আর যোগাযোগ করে নি।
তিন মাস পরে লালবাজারের থেকে মামা খবর এনেছিল এরা একটা বড় গ্যাং, সবটাই সাজানো হয় নিপুন ভাবে। বাড়িভাড়া নেওয়ার জন্য ফেক আই কার্ড থেকে শুরু করে প্রতিটা রিলেশন নকল হয়। এরা মেয়ে দেখতে এসে খুব আন্তরিকতা দেখায়। তাড়াতাড়ি বিয়ে করিয়ে নিয়ে মেয়েটিকে বিদেশে কোথাও পাচার করা হয়। ছেলেটি বেশ কিছুদিন লুকিয়ে থাকে। আবার নতুন শহরে নতুন পরিচয়ে নতুন করে জাল বিছায়। নিজের লুক চেঞ্জ করে নেয় প্রতিবার।
প্রতিটা খবরের সাথে সাথে শুভমের আত্মবিশ্বাস কমছিল ধীরে ধীরে। হঠাৎ একদিন ঘুমের মধ্যে চলে গেলেন তরুণ বাবু। নিরা দেবী পুজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন বহুদিন। যন্ত্রের মতো সংসারের দৈনন্দিন কাজটুকু শেষ করে মেয়ের ফটো নিয়ে বসে থাকতেন।
হঠাৎ একদিন শুভমের কাছে ম্যাসেঞ্জারে একটা মেসেজ আসে। অচেনা এক ভদ্রলোক একটা ফোন নম্বর দেয় এবং কিছু জানাতে চায়। সমুদ্রের মধ্যে একটা খড়কুটো আকড়ে ধরার মতো নম্বরটায় ফোন করে শুভম। ভদ্রলোক নিজের মেয়ের খোঁজ করছেন একিভাবে। উনি শুভমকে দেখা করতে বলেন বেহালায়। অনেক আশা নিয়ে শুভম যায় সেদিন।
ভদ্রলোক ওকে দেখে এবং সব শুনে বলেন তাদের গল্পটাও এক, শুধু ছেলেটা আলাদা। এর পর উনি শুভমকে বলেন - "মেয়েগুলোর সাথে খুব খারাপ হয়েছে বুঝতে পারছো নিশ্চই, কিন্তু কতটা খারাপ তোমার কোনো আইডিয়াও নেই।" চোখ দুটো দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছিল ওনার। শুভমের হাতে দুটো সিডি দিয়ে বলেন - "দেখে সহ্য করতে পারবেনা জানি। তবু দিলাম। এই যে ওরা মাসখানেকের জন্য বাড়ি ভাড়া নেয়। খরচা করে বিয়ে করে, কেনাকাটি করে, প্রতিটা অপারেশনের জন্য আলাদা ফোন সিম নেয়। এ সবের খরচা হিসাব করেছো কখনো? একটা মেয়েকে এ ভাবে তুলতে এক মাসের বেশি সময় এবং বেশ কয়েক লাখ টাকা খরচা। যেখানে খোলা বাজারে একটা মেয়ে কে তিন চার লাখে কিডন্যাপ করে বিক্রি করা হয়। তাহলে এভাবে বিয়ের নামে খরচা করে মেয়ে তুলে কি লাভ এটাই বড় প্রশ্ন? এর উত্তর আছে তোমার হাতের সিডি গুলোয়। আমি এক মেয়ের বাবা, তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়। কিন্তু এই নীল ছবিগুলো আমি বাধ্য হয়ে দেখেছি। আরব দেশে প্রচুর বিকৃতকাম শেখ ও বড় ব্যবসায়ী আছে। উত্তেজনার জন্য ওরা কি না করে। এখন নতুন শুরু হয়েছে এ সব সিডির ব্যবসা। নতুন বিবাহিত দম্পত্তির প্রথম রাত, মধু চন্দ্রিমার রাত, অরিজিনাল রেপের ছবি, অল্প বয়সী মেয়েদের ওপর শারীরিক অত্যাচারের অরিজিলাল সিডি এসব দেশে লাখ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। তেমন বিশেষ বিশেষ ছবির দাম ওঠে কোটির ঘরে । তবে এর জন্য নতুন নতুন মুখ দরকার। ভাল ঘরের মেয়েদের এভাবে ফাঁঁসিয়ে এ ব্যবসা ভারত আর বাংলাদেশে চলছে রমরমিয়ে। পুলিশ এদের হাতের মুঠোয়। বড় বড় মন্ত্রীরা এতে জড়িত। একটা মেয়েকে এরা ছ মাস এ ভাবে ইউস করে তারপর মেয়েগুলো কোনো শেখের হারেমের যৌন দাসীতে পরিনত হয়। এসব খবর মিডিয়াও করতে ভয় পায়। এদের হাত বড্ড লম্বা। লাখ নয়, এ সব কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। খুব খারাপ লাগছে বলতে নিজের মেয়ের খোঁজ করতে করতে তোমার দিদির ঘটনা জানতে পারি সোসাল নেটওয়ার্কে। এই ছবির মেয়েটির সাথে তোমার দিদির অসম্ভব মিল, তাই দেখে তোমায় ডাকি। আমার মেয়েরও এই পরিণতি। এখন বিদেশ মন্ত্রকে দৌড়াদৌড়ি করেও কিছু লাভ হচ্ছে না। মেয়েটা ঠিক কোথায় আছে, কোন দেশে তাই জানি না । তবু যদি আমরা এক জোট হয়ে চেষ্টা করি হয়তো কিছু করতে পারবো। অন্তত মানুষ সচেতন হলে এ সব ঘটনা কমবে। মেয়ে বিয়ে দেওয়ার আগে ছেলের সম্পর্কে লোকে ভাল করে খোঁজ নেবে।"
********
অন্ধকার ঘরে বসে ছিল শুভম। আলো জ্বালতে ইচ্ছা করছে না। সিডি দুটো টেবিলে, সাহস হয়নি চালিয়ে দেখতে। কভার ফটোতেই যে নগ্ন মেয়েটির ছবি একটু খুটিয়ে দেখলেই ওটা যে কুর্চির বোঝা যায়। মুখটা এবং সাজগোজ যদিও বদলে গেছে অনেকটাই।
হঠাৎ ডোর বেলটা বেজে ওঠে নিস্তব্ধতা খানখান করে। ধীর পায়ে উঠে শুভম খুলতেই দেখে প্রলয়, কলেজের বন্ধু। ঢুকেই বকবক শুরু করে দিল, ওকে নিজের ঘরে নিয়ে যায় শুভম
-"বোনের বিয়েটা হঠাৎ করেই ঠিক হয়ে গেল বুঝলি। বোনের এক নেট ফ্রেন্ড। আমাদের স্বজাতি, পাল্টি ঘর। ছেলের ব্যাঙ্গালোরে চাকরী। মা নেই। ওরা এসেছিল গত সপ্তাহে, কোনো দাবী নেই। রেজিস্ট্রি বিয়ে হবে সামনের সপ্তাহে। কার্ড করার আর সময় পাই নি। আসলে ছেলে নেক্সট মাসে কানাডা চলে যাবে বুঝলি। আপাতত বিয়ে করে হানিমুনে যাবে ........."
শুভমের কানে আর কোনো কথা ঢোকে না। কথা বলতে বলতে প্রলয় নিজের মোবাইল থেকে ফটো দেখাচ্ছিল পটাপট।
না, এই ছেলেটিকে শুভম চেনে না। তবে ছেলের বাবার মুখটা বড্ড চেনা, তাড়াতাড়ি দিদির বিয়ের ফটো গুলো খোলে শুভম। আমনের মামার সাথে বড্ড মিল। শুধু আমনের মামার মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, মাথায় টুপি, ইনি ক্লিন শেভ্ড। টুপি নেই, অল্প টাক মাথায়। প্রলয় বকেই চলেছে, তার বোনের আসন্ন ভাগ্য নিয়ে। ওদিকে শুভমের হাত ফটোশপে, দুটো ফটোকে এক রকম রূপ দিয়ে ফেলেছে প্রায়। কথা বলতে বলতে প্রলয়ের চোখে বিরক্তি ঝড়ে পড়ে। বলে - "কি করছিস এসব?" হঠাৎ টেবিলে নীল সিডি দুটোর দিকে চোখ পরতেই চোখ জ্বলে ওঠে প্রলয়ের। গলার টোন বদলে বলে - "গুরু, তোর কাছে পানু!!! এ রস থেকে আমায় বঞ্চিত করিস না ভাই। তোর যে এ গুন আছে জানতাম না মাইরি। তুই তো বরাবর গুডিবয় রে। "
সিডির দিকে হাত বাড়াতেই ওর হাতটা খপ করে ধরে শুভম। কেটে কেটে বলে - "বোনের বিয়েটা আটকা, নয়তো কদিন পর ওর এমন সিডি বাজারে দেখতে পাবি বলে দিলাম।"
শুভমের গলায় এমন কিছু একটা ছিল, প্রলয় কেঁপে ওঠে।
*******
আজ টিভিতে পেপারে একটাই খবর, মেয়ে পাচারের ব্যবসার কয়েকটি চাই হাতে নাতে ধরা পরেছে। ছেলের সাথে যে সাতজন আত্মীয় বন্ধু সেজে এসেছিল সবাই পুলিশের খাতায় মোষ্ট ওয়ান্টেড। বিভিন্ন জায়গায় এ ভাবে ওরা মেয়েদের ফাঁসিয়ে বিয়ে করে পাচার করে দেয় বাইরে। কান টানলে যেমন মাথা আসে এবার হয়তো একটা বড় গ্যাং ধরা পরবে। আপাতত সাত জনকেই লালবাজারে জামাই আদরে রাখা হয়েছে। অন্য রাজ্যেও এদের নামে অনেক মেয়ে পাচারের গল্প আছে। আজ নিরা দেবী সব কাজ ছেড়ে টিভির সামনে বসেছেন বহুদিন পর।
বাবার ফটোটাতে মালা পরিয়ে ধুপ জ্বেলে দেয় শুভম। মনে মনে বলে - "এ তো সবে শুরু, একদিন দিদিকে ঠিক ফিরিয়ে আনবো বাবা। আর দিদির মতো পরিনতি যাতে আর কারো না হয় সে দিকেও দেখবো। তুমি শুধু আশির্বাদ করো প্রলয়ের বোনের মতো যেন সব বোনেদের বাঁচাতে পারি।"